চরভদ্রাসন সাবরেজিস্ট্রি অফিস
সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৯ পিএম
চরভদ্রাসন সাবরেজিস্ট্রি অফিস। প্রবা ফটো
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত ফি আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী, পেশকার, দলিল লেখক, মুহুরি বা সংশ্লিষ্টদের সিন্ডিকেটের পাকে পড়ে উপজেলার সাধারণ মানুষ সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দলিল করতে বাধ্য হচ্ছেন। অতিরিক্ত অর্থ না দিলে বিভিন্ন আইনি জটিলতা দেখিয়ে দলিল সম্পাদন বন্ধ রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত ফি’র তালিকা টানানো থাকলেও তা কেউ মানছেন না। তালিকায় বিভিন্ন প্রকৃতির দলিলের মধ্যে সাফকবলা, হেবা-ঘোষণাপত্র, দানপত্র ও বন্ধকি দলিল সম্পাদনের জন্য পৃথক ফি উল্লেখ রয়েছে। তারপরও উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের স্বেচ্ছাচারিতায় জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিটি হেবা-ঘোষণাপত্র দলিল রেজিস্ট্রির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ১ হাজার ২৩০ টাকা। কিন্তু ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের হেবা-ঘোষণাপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য এক একজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্তত ৬০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একজন মুহুরি জানান, প্রতিটি দলিলের বিপরীতে উল্লিখিত জমির মোট মূল্যের ওপর ১ শতাংশ অফিসকে দিতেই হবে। এ ছাড়া অফিসের মুহুরি ও অন্য কর্মচারীদেরও খরচ রয়েছে। তাই ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের একটি হেবা-ঘোষণাপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা লেগে যায়। এই সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একটি সিন্ডিকেট করে রাখা হয়েছে। তাই ক্রেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্ক না নিয়ে দলিল সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া সাফকবলা দলিল সম্পাদনের জন্য সরকারি ফি হচ্ছে জমির মূল্যের প্রতি লাখে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে। সেখানে প্রতি লাখে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। উপজেলার জমি ক্রেতারা প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন।
উপজেলার কেএম ডাঙ্গী গ্রামের শেখ আক্কাস নামে একজন জানান, ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জমির দলিলের জন্য সরকারি ফি বাবদ এক মুহুরি আমার কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া অফিস ও অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ২০ হাজার টাকাসহ প্রায় ২ লাখ টাকা লেগেছে। কিন্তু দলিলটি সম্পাদনের জন্য ৭৫ হাজার টাকা সরকারি ফি আদায়ের বিধান রয়েছে।
আরেক জমি ক্রেতা শহিদুল ইসলাম প্রামানিক জানান, দানপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য ২ শতাংশ উৎস কর নেওয়ার কোনো বিধান নেই। কিন্তু সাবরেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরিরা আমাদের কাছ থেকে তা নিচ্ছেন। পাশাপাশি অফিস খরচের কথা বলে নিচ্ছেন ১ শতাংশ। এসব অতিরিক্ত অর্থ না দিলে বিভিন্ন আইনি জটিলতা দেখিয়ে দলিল সম্পাদন বন্ধ রাখা হয়।
এ ছাড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের একটি নকল ওঠাতে সরকারি ৩৩০ টাকা ফির স্থলে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কামরুল হাসান বলেন, ‘মাত্র চার সপ্তাহ হয়েছে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিটি দলিল সম্পাদনের জন্য অফিসকে অতিরিক্ত ১ শতাংশ দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’