× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চাতালের চুল্লি এখন পরগাছায় ভরা

নাঈম ইসলাম, শেরপুর

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:০২ পিএম

আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৫ পিএম

শেরপুর ঢাকলহাটি এলাকায় একটি চাতাল কলে ধান শুকাচ্ছেন শ্রমিকরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা

শেরপুর ঢাকলহাটি এলাকায় একটি চাতাল কলে ধান শুকাচ্ছেন শ্রমিকরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা

দেশের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী জেলা শেরপুর। এ জেলায় ব্যাপক ধান উৎপাদন হয় বলে ৯০ দশকের গোড়ার দিকে এখানে চাতাল শিল্পের সমৃদ্ধি ঘটে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় লাখো শ্রমিকের। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া ও নানা প্রতিকূলতায় দিন দিন ধ্বংসের পথে এই শিল্প। এতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ হয়েছেন বেকার, কেউবা পেশা বদলে ফেলেছেন। তবে জেলায় তেমন কোনো শিল্পকারখানা না থাকায় বেশিরভাগ শ্রমিক এখনও বেকার। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা চাতাল ব্যবসায়ীরা।

চাউলকল মালিকদের দেওয়া তথ্যমতে, জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ১০০ চাতাল ছিল। একসময় চাতালের চুল্লিতে দিন-রাত আগুনের লেলিহানশিখা থাকত। অথচ এখন ভরে গেছে পরগাছায়। তাই লোকসানে অনেক ব্যবসায়ী ভেঙে ফেলছেন সেই স্থাপনা। কোথাও গড়ে উঠেছে মার্কেট, কোথাও কৃষি ক্ষেত আবার, কোথাও অটো রাইস মিল। বর্তমানে কোনোমতে টিকে আছে ১০০-১৫০ চাতাল কল।

স্থানীয়রা ও ব্যবসায়ীরা জানায়, একটা সময় চাতাল ব্যবসা ঘিরেই শেরপুরের অর্থনীতি ছিল রমরমা। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া ও নানা প্রতিকূলতায় এই শিল্পটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। গত ৫-৭ বছর ধরে এ ব্যবসায় চলছে চরম মন্দা। বিশেষ করে অটো রাইস মিল করার প্রতিযোগিতায় এবং মধ্যবৃত্ত ব্যবসায়ীদের মূলধন স্বল্পতায় এমন অবস্থা হয়েছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা ব্যবসায়ীরা বন্ধ করে দিচ্ছেন চাতাল কলগুলো।

১৯৯১ সালে শেরপুর পৌর শহরের মোবারকপুর মহল্লার আখেরমামুদ বাজারে চাতাল কল ও মিল স্থাপন করেন ছামিদুল হক কেনা। ভোর না হতেই কর্মচাঞ্চল্য শুরু হতো সে সময়। সেখানে কাজ করতেন রামকৃষ্ণপুরের মুসলিম উদ্দিন, মুসলিম উদ্দিনের স্ত্রী ফেলো বানু। তারা বলেন, ‘এই খলায় আমরা হাসকি ও বয়েল চাল করতাম। এখানে আমরা ১৬ জন প্রায় ২০ বছর কাজ করেছি। নতুন মৌসুমে আমাদের নতুন শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা দেওয়া হতো। পরবর্তী মৌসুমের জন্য মহাজনরা অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে রাখত। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে কাজ কমে যায়, এমনকি একপর্যায়ে মিল বন্ধ হয়ে যায়। 

একসময়কার ধান-চালের বড় ব্যবসায়ী ছিলেন আখের মামুদ বাজারের আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, অটো রাইস মিল আসার পর ব্যবসার বাতি নিভে গেছে। আমাদের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে মহাজনরা সব ধান কিনে নেয়। আর অটো মিলে কয়েক হাজার মণ ধান একবারেই ভাঙা হয় উন্নত মেশিনে। এইসব কারণে আমি অনেক ঋণে পড়ে যাই। 

আখের মামুদ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদ আলম বলেন, ১৯৯০ সালের দিকে আখের মামুদ বাজারে প্রয়াত মকবুল হোসেন চাতাল মিল গড়ে তোলেন। সেখানে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ১৫-২০ জন নিয়মিত কাজ করতেন। কিন্তু ২০০৮ সালের দিকে তাদের দুটো চাতাল মিল ও খলা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ী ও মালিকরা প্রচুর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

 একই কথা জানান কালীগঞ্জ দমদমার আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অটো রাইস মিলের ব্যবসায়ীরা কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে। আর আমরা লাখ টাকার ব্যবসায়ী, আমাদের বাকি পড়লে ব্যবসা এমনিতেই বন্ধ থাকে। নিজেদের চাতাল, খলা ও মিল থাকার পরও ঋণের চাপে সবকিছু বাদ দিয়েছি।’

এদিকে কোনোমতে ব্যবসা ধরে রেখেছেন মোবারকপুর নয়া পাড়ার ব্যবসায়ী বাবু মিয়া। তিনি বলেন, ‘টেনেটুনে কোনোমতে ব্যবসা চালাচ্ছি। অন্য ব্যবসা জানা নেই, তাই আর কি করমু। কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে তাল মেলাতে পারি না।’ 

জাতীয় কৃষক সমিতির জেলা সভাপতি রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘জেলার সহস্রাধিক চাতাল, খলা একসময় থাকলেও এখন শ’খানেক কোনোমতে টিকে আছে। বড় বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাল মেলাতে না পেরে এমন অবস্থা হয়েছে। সরকার যদি পৃষ্ঠপোষকতা করে তাহলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক, শ্রমিক সবারই ভাগ্য পরিবর্তন হবে। তাই এদিকে সরকারের নজর দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ 

জানতে চাইলে শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, ‘যদি সরকার প্রণোদনা দেন তাহলে ফের সমৃদ্ধ হবে এই জেলার চাতাল শিল্প। তাই সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা