হরতাল-অবরোধে জীবিকায় টান
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৫ পিএম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৩ পিএম
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া কাঠবাজার এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী মো. নূরুজ্জামান বাজার সমিতির কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু অবরোধের মধ্যে দোকান খুলে রাখলেও ক্রেতারা কাঠ কিনতে আসেন না। বেচা-বিক্রি বন্ধ থাকলেও প্রতি সপ্তাহে তাকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। কিস্তি দেওয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন। শুধু নূরুজ্জামানই নয়, তার মতো জেলা শহরের কয়েকশ ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। এর বাইরে শহরতলির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ভয়ে দোকন বন্ধ রাখে।
লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে কিশোরগঞ্জের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বেচা-বিক্রি কমে যাওয়ায় তারা প্রতিদিনের দোকান খরচসহ অন্যান্য খরচ চালাতে না পেরে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও সমিতির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। তারা ব্যবসা করে প্রতি সপ্তাহে, মাসে কিংবা প্রতিদিন ঋণের টাকা পরিশোধ করে আসছেন। নভেম্বর মাসের শুরু থেকে অবরোধ আর হরতালের কারণে তাদের ব্যবসায় অনেকটাই ধস নেমেছে। এখন ব্যবসা করে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, সংসারের খরচ মেটানোই দায় হয়ে পড়েছে।
শহরের খরমপট্টি এলাকার কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকানের কর্মচারী অনিল চন্দ্র জানান, ঋণ নিয়ে মালিক দোকানটি করছিলেন। এজন্য প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে ঋণের কিস্তি দিতে হয়। আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ কাজ হতো তাতে ঋণের টাকা দেওয়া কোনো ব্যাপার ছিল না, কিন্তু অবরোধ ও হরতাল শুরুর পর শহরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটাই কম। ফলে আগের মতো কাজ হয় না। দোকানও প্রতিদিন খোলা হয় না। আবার বন্ধও রাখা যায় না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসাই বন্ধ করে দিতে হবে। এতে বেকার হয়ে পড়তে হবে আমার মতো অনেক কর্মচারীকে।
শহরের হয়বত নগর এলাকার আসবাব ব্যবসায়ী আলী আকবর ব্যবসা বড় করার জন্য বেসরকারি সংস্থা থেকে তার স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এ ঋণের টাকায় তিনি কিছু আসবাব তৈরি করেছেন। এখন সেই আসবাবের ক্রেতা নেই। তার স্ত্রী মোহনী আক্তার বলেন, ‘এখন যে বেচাকেনা হচ্ছে, তাতে সংসারই চলছে না। প্রতি সপ্তাহে ৮০০ টাকার কিস্তি দিতে অন্যত্র ঋণ করতে হচ্ছে। কিছুদিন এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। ঋণ শোধ করার জন্য বাসাবাড়ি বিক্রিতে হাত দিতে হবে।’
জুতা-স্যান্ডেল কিনে এনে বিক্রি করেন শহরের স্টেডিয়াম এলাকার ব্যবসায়ী রতন রায়। তিনি জানান, তার দোকানে কয়েকজন কর্মচারীও রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ঋণ করে আরও দুই লাখ টাকার মালামাল তুলেছেন। এরই মধ্যে অবরোধ শুরু হওয়ার কারণে ক্রেতা কমে গেছে। হরতাল-অবরোধের কারণে বেচা-বিক্রি কমে যাওয়ায় তিনি ঋণ নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা সবাই এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান। তারা স্বাভাবিক জনজীবনের পক্ষে।