লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩০ পিএম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০১ পিএম
লোহাগাড়ার চুনতি লম্বাশিয়ার সংরক্ষিত বন থেকে তোলা হচ্ছে বালু। কাটা হয়েছে পাশের পাহাড়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের লম্বাশিয়া এলাকার সংরক্ষিত বনের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। নির্বিচার বালু তোলায় পাহাড়ি ছড়ার অন্তত ৩০টি স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছড়ার পাশে থাকা পাহাড়গুলোর একটি অংশও কেটে ফেলা হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা পাঁচ বছর ধরে সংরক্ষিত এ বনের বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। এতে এলাকার অন্তত ৩০টি পাহাড়-টিলা বিলীন হয়ে গেছে। প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালানোর পরও বালু তোলা ও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না। বালু নিলামে নেওয়া ব্যক্তি ও উত্তোলনকারীদের সাথে প্রশাসনের যোগসাজোশ রয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট ও পদুয়া রেঞ্জের ডলু বনবিটের আওতাধীন ঘোড়ামারা, করিম্মাকাটা, বদারবর ঘোনা, সাইটতালা ও লম্বাশিয়া এলাকায় সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পাহাড়ের ছড়ায় অন্তত ২০টি মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ছোট-বড় শতাধিক পাহাড়ের মধ্যে অন্তত ৩০টি ইতোমধ্যে সাবাড় করে ফেলেছে।
স্থানীয়রা জানান, হাতি চলাচলের করিডোর হিসেবে নির্ধারিত এসব পাহাড় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে পথ হারিয়ে হাতির পাল লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে ফসলের ক্ষতিসহ মানুষের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এসব এলাকার লোকজন আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এছাড়া এ বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। আবাসস্থল নষ্টের কারণে বন্য প্রাণীর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। গত বছরের ২৭ নভেম্বর বালু তোলার কারণে ছড়ায় তৈরি হওয়া গর্তে পড়ে দেড় বছর বয়সি একটি হাতিশাবকের মৃত্যু হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। বালু উত্তোলন করার ফলে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকায় হাতির পাল নিয়মিত বিচরণ করে। এ ছাড়া অতিরিক্ত বালু পরিবহনের গাড়ি চলাচলের ফলে সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। বর্ষার মৌসুমে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালির কারণে চলাচল মুশকিল হয়ে পড়ে। বছরের পর বছর পাহাড় কাটার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও কয়েকদিন পর আবার শুরু হয় বালু তোলা।
চুনতি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী সানজিদা রহমান বলেন, ‘বালু উত্তোলন এখানকার নিয়মিত ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। প্রশাসন বালু জব্দ করে নিলামে বিক্রি করলে ওই সিন্ডিকেট তা আবার কিনে নেয়। তাই বালু নিলাম কোনো সমাধান নয়। এজন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জড়িতদের অর্থদণ্ডসহ খননযন্ত্র জব্দ করতে হবে। বালু পরিবহন করতে পাহাড় কেটে যে রাস্তা বানিয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুন লায়েল বলেন, ‘প্রশাসনের কোনো কর্মর্কতা জড়িত নেই। জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া জব্দকৃত বালু নিলামে দেওয়ার পর নতুন করে বালু তোলার সুযোগ নেই। লম্বাশিয়াসহ অন্যান্য পাহাড় কাটা বন্ধে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে অভিযান চালানো হবে।’ চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ছড়া থেকে বালু তোলা হলে পাহাড়ধসের শঙ্কা থাকে। এটি বনভূমির জন্য ক্ষতিকর। তাই পাহাড় ও বনের ভেতর প্রবহমান ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয় না। যারা বালু তুলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’