রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০০:২৩ এএম
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫২ এএম
জাপা চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। ছবি : সংগৃহীত
ভাইয়ের আসনে প্রার্থী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর-৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন পাঁচবার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভাইয়ের আসনে আসীন হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জিএম কাদের। একই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান সাদ এরশাদও।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। রংপুর-৩ আসনে ওই নির্বাচনে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এরশাদের ছেলে রাহগীর আলমাহি সাদ এরশাদ। নির্বাচনে সাদ বিজয়ী হলেও তার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বনিবনা হয়নি। তা ছাড়া তিনি রংপুরে না থাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। জেলা ও মহানগর নেতাদের বাদ দিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নেন তিনি। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে তিনি ভূমিকা না রাখায়ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা ভোটারদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন। ফলে স্থানীয় নেতাদের মধ্য থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিএম কাদেরকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি ওঠে। ২০২১ সালের ২১ আগস্ট রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংগঠনিক সভায় স্থানীয় নেতারা জিএম কাদেরের হাত তুলে দেন রংপুর-৩ আসনের প্রার্থিতার সনদ। তাকে এ আসনের প্রার্থী উল্লেখ করে গত ১১ নভেম্বর রাতে রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগান জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর আজমল হোসেন লেবু। নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রচারণা পোস্টারে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত ১৮ নভেম্বর রংপুর জেলা ও মহানগরসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে মতামত দেন এবং চেয়ারম্যান নির্দেশ দিলে নির্বাচন বানচালে রংপুর থেকে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন। যদি নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে যেতেই হয়, তবে ১০০টি সংসদীয় আসন ও নির্বাচনের পর ১০টি মন্ত্রীর পদ দেওয়ার দাবি জানান নেতারা।
এদিকে বিগত নির্বাচনের মতো এবারও দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। ছেলে সাদ এরশাদ ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রওশন এরশাদ।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জিএম কাদের মুখ না খুললেও ২০ নভেম্বর ঢাকায় দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু। সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মমিনুর আলমের কাছ থেকে জিএম কাদেরের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাফিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম বাবলু, রংপুর সিটির ১৯নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি আতোয়ার রহমান, আইনজীবী ফেডারেশনের সদস্য মাকসুদার রহমান রুবেল।
চেয়ারম্যানের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতারা অবগত নন বলে জানিয়েছেন। এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও চলছে। আজমল হোসেন লেবু বলেন, আমি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নির্দেশে তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুর। এ আসনে দলের চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন। দলের চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সারা দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনে অংশ নেবেন কি নেবেন না তা জানাবেন। নির্বাচনের নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, কিন্তু নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যাবে কি না তা চূড়ান্ত হয়নি।
চেয়ারম্যানের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির। এ বিষয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটির মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, চেয়ারম্যান মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, তার মানে এই নয় যে তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আর সাদ এরশাদ নির্বাচন বিষয়ে বলেছেন, ‘আমি অনেক উন্নয়ন করেছি। এ আসনের মানুষ আমাকে আবারও সংসদ সদস্য দেখতে চায়। বাবার এ আসন থেকে আবারও নির্বাচন করার ইচ্ছে রয়েছে।’
এখনও ফরম কেনেননি রওশন ও সাদ এরশাদ
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নামে দুটি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এখনও কোনো আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। মনোনয়ন ফরম নেননি এরশাদ-পুত্র রাহগির আলমাহি এরশাদও (সাদ এরশাদ)।
দ্বিতীয় দিনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার ৬২২টি মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম দিন বিতরণ করা হয়েছিল ৫৫৭টি মনোনয়ন ফরম। এ নিয়ে দুই দিনে মোট ১ হাজার ১৭৯টি মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন, চেয়ারম্যানের নামে ঢাকা-১৭ এবং রংপুর-৩ এই দুটি সংসদীয় আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। তা ছাড়া মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আব্দুর রশীদ সরকার, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, উপদেষ্টা পনির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
তিনি আরও বলেন, ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে। প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের দাম ৩০ হাজার টাকা। তবে এর মধ্যে কিছু কিছু মনোনয়ন ফরমের ক্ষেত্রে ‘সৌজন্য’ আছে বলেও জানান তিনি।
রওশন এরশাদ এবং সাদ এরশাদের মনোনয়ন সম্পর্কে দেলোয়ার জালালী বলেন, ‘তাদের দুজনের কেউ মনোনয়ন ফরম নেননি। তবে গতকাল রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে মহাসচিবকে (মুজিবুল হক চুন্নু) দুই দফায় ফোন করা হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিলÑ রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদের নামে মনোনয়ন ফরম নেওয়া হবে। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের পক্ষে কেউ মনোনয়ন ফরম নিতে আসেননি।’
‘নির্বাচনের জন্য আস্থার শতভাগ পরিবেশ এখনও সৃষ্টি হয়নি’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতার পালাবদল সম্ভব নয়। গেল ৩৩ বছরে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন নিয়েই কথা আছে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচনে যারা জিতেছে তারা বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আর যারা ক্ষমতায় যেতে পারেনি তারা বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য বিভাগ অনুযায়ী আটটি বুথ করা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন দুটি বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। ২৪ নভেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ, ২৫ নভেম্বর খুলনা ও বরিশাল বিভাগ, ২৬ নভেম্বর ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।