সম্ভাব্য প্রার্থীর কথা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৭ এএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫৮ এএম
ভূঞাপুর পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ। ছবি : সংগৃহীত
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ আসন (ভূঞাপুর-গোপালপুর) থেকে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান ভূঞাপুর পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধ মাসুদুল হক মাসুদ। সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার প্রতিবাদকারী ’৭৫-এর এই প্রতিরোধযোদ্ধার আত্মবিশ্বাস নৌকা মার্কা পেলে আসনটি এবারও দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে অঙ্গীকার করেছেন, ভূঞাপুর-গোপালপুরকে এর উপযোগী করেই এগিয়ে নিতে চান তিনি। নির্বাচনী এলাকায় শুধু উন্নয়নই নয়; পুরো জনপদকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের সভাপতি মাসুদ। এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন বলেও অঙ্গীকার করেন তিনি।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা প্রতীক পেলে টাঙ্গাইল-২ আসন নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা এভাবেই তুলে ধরলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ থেকে এবার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে নিজের আত্মবিশ্বাসের কথা তুলে ধরতে গিয়ে মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, দলের মনোনয়ন নিয়ে ভূঞাপুর পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকার জীবনমানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কারণে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী এবার টাঙ্গাইল-২ আসন (ভূঞাপুর-গোপালপুর) থেকে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি। সে লক্ষ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরমও কিনেছেন।
মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, প্রতিবার বর্ষার সময় যমুনা নদীসংলগ্ন ভূঞাপুরের পূর্বপাড় ভাঙনের মুখে পড়ে, এজন্য আমি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হলে ভাঙন রোধে বাঁধের যে অংশটা এখনও বাকি রয়েছে, তা বাঁধানোর কাজ সম্পন্ন করব। এছাড়া এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে মাদক, সন্ত্রাস চোরাকারবারি, জঙ্গিবাদের মতো সামাজিক সমস্যাগুলো বন্ধ করতে ত্বরিত উদ্যোগ গ্রহণ করব। এসব সমস্যা সমাধানে ‘জিরো টলারেন্স’নীতি অবলম্বন করা হবে বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি এমপি নির্বাচিত হলে এই এলাকায় (ভূঞাপুর-গোপালপুর) কোনো ধরনের বেআইনি কার্যক্রম চলতে দেব না। আমার বিশ্বাসÑ আমার কথা জানতে পারলে এলাকার অনিয়ম ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তারা এসব কাজ করার সাহস পাবে না। আমার নির্বাচিত এলাকা ভূঞাপুরের বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকেই এসব কথা বলছি। মেয়র হওয়ার পর এলাকায় যত ধরনের অপকর্ম ছিল, সব বন্ধ করে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই আসনে বিগত দিনে যারা এসব কাজে সুযোগ দিয়েছে, নেত্রী এবার এমন লোককে দলীয় মনোনয়ন দেবেন না বলে আমি মনে করি।
এই আসনে বর্তমান এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির। দলীয় নেতা হত্যার নির্দেশসহ নানা অভিযোগে ইতোমধ্যে তিনি বিতর্কিত। ফলে এলাকার মানুষ এবার পরিবর্তন চায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এলাকার রাজনীতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আবদুস সালাম পিন্টু তখন মন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ও তাকে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার সুযোগ দেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কারণে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সকল সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি যদি আমাকে মনোনীত করেন, তাহলে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে কাজ করে যাব। দলীয় সভাপতির বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেত্রী (শেখ হাসিনা) কিন্তু একটা কথা বলেছেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে যেহেতু আমি একজন মুক্তিযোদ্ধ। সেহেতু আমি এবার টাঙ্গাইল-২ আসন (ভূঞাপুর-গোপালপুর) থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। আমার বিশ্বাস নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন মাসুদুল হক মাসুদ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভারতে গিয়ে অন্যদের মতো ট্রেনিং নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে মাসুদ ফিরে যান শিক্ষাজীবনে। কিন্তু তা খুব বেশিদিন চালানো সম্ভব হয়নি। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনাটিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি তিনি। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আবারও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই স্মৃতি তুলে ধরে এই প্রতিরোধযোদ্ধা বলেন, সেদিন আমার মতো যারা প্রতিরোধ শুরু করেছিল, তাদের জন্য আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীর জীবন রক্ষা পায়। জিয়াউর রহমান সেদিন সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে নির্যাতন শুরু করেছিলেন, প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে তা বন্ধ করতে বাধ্য হন।
প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অপরাধে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নির্যাতিত এবং তিন বছর কারাবরণ করতে হয়েছিল তাকে। ১৯৮০ সালে কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে আবারও সক্রিয়ভাবে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন। ইবরাহীম খাঁ কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। পরের বছর ভূঞাপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ৮৪ সালে থানা যুবলীগের সভাপতি ও থানা আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৩ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন মাসুদুল হক মাসুদ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ভূঞাপুর পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।