× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মাইক্রোবাস বাহিনীর তাণ্ডব নাটোরে

নাটোর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৪ পিএম

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৪ পিএম

মাইক্রোবাস বাহিনীর তাণ্ডব নাটোরে

মাদ্রাসার অফিস কক্ষে বসে কোরআন পাঠ করছিলেন হাফেজ সাইদুল ইসলাম (৩৮)। নাটোর সদর উপজেলার মাঝদীঘা উলুম নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক তিনি। তা ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন কর্মীও। গত ১৭ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি যখন কোরআন শরিফ পড়ছিলেন, ঠিক সে সময়ই ৫-৭ জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত এসে তাকে জোর করে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। হাত-পা বেঁধে হাতুড়িপেটা করা হয় তাকে। তারপর ফেলে রাখা হয় মাদ্রাসা থেকে প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে রাস্তার পাশে। সদর উপজেলার মাঝদীঘা পূর্বপাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে সাইদুল ইসলাম এখন নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

একইভাবে গত ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলা হয়েছে সজীব হোসেনকে। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার রামশা কাজীপুর এলাকায় ক্যারম বোর্ড খেলার সময় তাকে সাদা রঙের মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায় হেলমেট পরিহিত ছয়-সাত জন। বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সজীবকেও হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজীপুর হাজীপাড়া গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে সজীবকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় নিজেদের পুলিশ বলে দাবি করেন তারা। 

একই কায়দায় গত ৩ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া বাজার থেকে ফেরার পথে অজ্ঞাত কয়েকজন দুর্বৃত্ত মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তিকে জোর করে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসে তুলতে না তুলতেই তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। তারপর এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মাসুদ রানা বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নাগশোষা গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক তাইজুল ইসলাম টিপু গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। 

এক মাসে হামলা-নিপীড়নের ১০ ঘটনা

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, গত এক মাসে নাটোরের চার উপজেলায় এ রকম পৃথক ১০টি হামলা-নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। হেলমেট বাহিনীর মুখোশপরা এই সদস্যরা আসছে কখনও সাদা মাইক্রোবাসে, কখনও মোটরসাইকেলযোগে। এই ১০ ঘটনায় যে ১০ নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের সবাই সরকারবিরোধী সমমনা দলের। আহতদের তিনজন বিএনপি ও যুবদলের। বাকি সাতজন জামায়াতে ইসলামী ও বিভিন্ন ইসলামী দলের। তাদের কাউকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, কাউকে হাত-পায়ের রগ কেটে, কাউকে আবার গুলি করে আহত করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা কেউ হাসপাতালে, কেউ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

পুলিশ, ভুক্তভোগী নেতাকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ১০ হামলার ঘটনা ঘটেছে নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া ও লালপুর উপজেলায়। এর মধ্যে ৫টি ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে নিয়েছে পুলিশ। তবে মামলাগুলোতে কোনো আসামির নাম উল্লেখ নেই। মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা অজ্ঞাত। অন্যদিকে এসব হামলা ও মামলার বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। আহত নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত একটি ঘটনা বাদে সবকটিতেই হামলাকারীরা মুখোশপরা ছিল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে তাদের কারও সঙ্গে বিরোধ নেই। রাজনৈতিক কারণেই হামলাগুলো হয়েছে। তবে পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। অন্যদিকে পুলিশের দাবি এসব হামলার ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। 

বেশিরভাগ হামলাই হয়েছে সন্ধ্যা ও রাতে 

গত ১৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে মোটরসাইকেলে করে নলডাঙ্গা বাজার থেকে নিজের বাড়ি বাঁশিলায় ফিরছিলেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষক ও অর্থ জোগানদাতা নাসির উদ্দিন সরকার (৬৫)। সঙ্গে ছিলেন জামায়াতের কর্মী ও ইসলামী বক্তা আবু নওশাদ নোমানী (৪২)। পথে সোনাপাতিল তালতলা এলাকায় মুখোশ পরিহিত ছয়-সাত জন তাদের দুজনকে থামিয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে চলে যায়। 

গত ২৫ অক্টোবর রাত পৌনে ৯টার দিকে নলডাঙ্গার নসরতপুর বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে পিটিয়ে জখম করা হয় জামায়াত কর্মী আলাউদ্দিনকে (৬০)। পরদিন ২৬ অক্টোবর রাতে নলডাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফজলুর রহমানের (৬৫) ওপর হামলা চালিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় হেলমেট বাহিনী। ৩০ অক্টোবর রাতে নলডাঙ্গার খাজুরা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোশারফ হোসেনকে (৭৪) বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে সড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়। ১০ নভেম্বর দুপুরে জুমার নামাজ শেষে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে সিংড়ার সাতারদীঘি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুর রাজ্জাককে (৭০) পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। গত মাত্র এক মাসে এ ধরনের ১০টি ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এসব ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি। হামলার শিকার ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ঘটনার পর প্রথমদিকে গণমাধ্যমে কথা বললেও এখন আর মুখ খুলতে চাইছেন না।

এ প্রসঙ্গে জামায়াত কর্মী ও পল্লী চিকিৎসক আলাউদ্দিন জানান, তার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। জামায়াত করেন বলেই হামলা করে তাকে ভয় দেখানো হয়েছে। প্রথমে মামলা নিতে না চাইলেও পরে পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেছে।

সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন জানান, মাদ্রাসা শিক্ষকের ওপর হামলার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরে তাকে আহত অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কেন হামলা চালানো হয়েছে, কোন রঙের মাইক্রোবাস ব্যবহার করা হয়েছে, এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাইক্রোবাসের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি অসুস্থতার কথা বলে ফোন কল কেটে দেন।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ জানান, পুলিশ দুর্বৃত্তদের কাউকে এখনও শনাক্ত করতে পারেনি। গ্রেপ্তার করবে বলে মনেও হয় না।

সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই পুলিশের কাছে

এদিকে মুখোশপরা হেলমেট বাহিনী ও সাদা রঙের মাইক্রোবাসের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানাচ্ছে পুলিশ। নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছিম আহম্মেদ জানান, হামলার ঘটনায় মামলা রেকর্ড হয়েছে। এজাহারে ছয়-সাত জন অজ্ঞাতের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাদা রঙের মাইক্রোবাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

একই বক্তব্য দেন নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম। তিনি জানান, নলডাঙ্গায় এসব হামলায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত চলছে। সাদা রঙের মাইক্রোবাসের বিষয়েও কোনো কিছু জানা যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আবুল কালাম বলেন, ‘পুলিশের ওপর আস্থা না থাকলে ভুক্তভোগীরা আদালতে যেতে পারেন। আদালতে মামলা করলে অন্য সংস্থাকে দিয়েও তো তদন্ত করা যায়।’

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, প্রতিটি ঘটনায় অভিযোগের পর মামলা হয়েছে। সেগুলো তদন্তাধীন। প্রতিটি অভিযোগই অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। সাদা রঙের মাইক্রোবাস ও জনমনে ভীতি সঞ্চারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা