শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ২০:১২ পিএম
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৭ পিএম
ঝর্ণা দিওসহ ছয় বিধবা বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছেন। প্রবা ফটো
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বিধবাপল্লীর সেই ঝর্ণা দিওসহ ছয় বিধবা বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছেন। অন্য পাঁচজন হচ্ছেন—সমিলা রাকসাম, মালতি রাকসাম, মোসাম্মৎ হাজেরা, মোসাম্মৎ লাকজান এবং কেরেঙ্গাপাড়ার মোসাম্মৎ ছাহেরা খাতুন।
চলতি বছরের ১২ আগস্ট ‘স্বীকৃতির অপেক্ষায় ঝর্ণা দিও’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ খবর প্রকাশ করে। এতে স্থানীয় প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৮৬তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ ছয়জনকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে তাদের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই বিধবাপল্লীর ২০ জন নারী বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেলেন। স্বীকৃতি পাওয়া ২০ জনের মধ্যে সাতজন ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
বীরাঙ্গনারা জানান, শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ীর নিভৃত পল্লী সোহাগপুর। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২৫ জুলাই নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল কাঁকরকান্দি ইউনিয়নের এ গ্রামে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা এদিন ১৮৭ জনকে হত্যা করে। সম্ভ্রমহানি করা হয় নারীদের।
তারা আরও জানান, খুঁজে খুঁজে গ্রামের সকল পুরুষকে হত্যা করা হয়। সেই থেকে গ্রামটি বিধবাপল্লী নামে পরিচিত লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের জঘন্যতম ও নৃশংসতম ওই গণহত্যায় গ্রামের ৬২ জন নারী বিধবা হন এবং তাদের অনেককেই শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। সম্প্রতি সোহাগপুর গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি মাটির ঘর। দেয়ালের অনেক জায়গা ভেঙে গেছে। টিনের চালায় মরিচা ধরেছে। তাতে ফুটো হয়ে বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। এ ঘরেই মেয়ে লিন্ডা দিওর সঙ্গে বসবাস করছেন ঝর্ণা দিও। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়া ঝর্ণা ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। চোখে খুব একটা দেখেন না। এমনকি ভালো করে কথাও বলতে পারেন না। ঝর্ণা জরায়ু ক্যানসারসহ নানা রোগে ভুগছেন বলে জানালেন তার মেয়ে। তবে তার এ প্রাপ্তিতে মেয়েসহ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা খুব খুশি হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবিত ২৯ জন বিধবাকে ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৯টি পাকা বাড়ি করে দেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সোহাগপুরে ‘বীর কন্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। শহীদদের স্মরণে গ্রামটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ’। বিধবাপল্লীর রাস্তা পাকা করা হয়েছে। শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ ‘সৌরজায়া’ স্থাপন করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সদস্যরা তাদের বেতনের টাকায় বিধবাদের কিনে দিয়েছেন জমি। বর্তমানে ওই গ্রামে ২২ জন বীরাঙ্গনা বেঁচে আছেন।