প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২২:২৬ পিএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৪৩ পিএম
বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে ধান। প্রবা ফটো
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে সারা দেশে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে চারজন একই পরিবারের সদস্য। কক্সবাজারের টেকনাফে অব্যাহত বর্ষণে ঘরের দেয়াল ধসে পড়লে মারা যান তারা। বিভিন্ন জেলায় আহত হয়েছেন কয়েকজন। গাছ উপড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক জেলায়। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর হয়ে অতিক্রম শুরু করে। বেলা ৩টায় উপকূল অতিক্রম শেষ হয়। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার। মিধিলির প্রভাবে আট বিভাগে ৯১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পরে ঘূর্ণিঝড়টি বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা জানান।
মিধিলির প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়ায় বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন এলাকার নৌপথ। বরগুনায় মাছের ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। একই জেলায় ২০টি ট্রলারে দুই শতাধিক জেলে নিখোঁজও রয়েছেন। মৃত অন্য দুইজন হলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মিরসরাই এলাকার এক বৃদ্ধ ও এক শিশু। গাছ উপড়ে পড়লে তাদের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১১ নম্বর ও শেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি বর্তমানে পটুয়াখালী ও তার কাছাকাছি এলাকায় গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে এবং বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
লঞ্চ চলাচল বন্ধ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে ঢাকার সদরঘাট থেকে সারা দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নদীবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়।
বরগুনায় ট্রলার ডুবে দুই শতাধিক জেলে নিখোঁজ
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের কারণে নিশাত নামক একটি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আরও ২০টি ট্রলারসহ দুই শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বরগুনার এফবি নিশাত নামের ট্রলারটি দমকা হাওয়ায় উল্টে যায়। আর পাথরঘাটা উপজেলার ২০টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ২০০ জেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
পটুয়াখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
মিধিলি পটুয়াখালীর কাছ দিয়ে পায়রা-মোংলা উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে রাঙ্গাবালী, গলাচিপার চরাঞ্চল। পটুয়াখালীতে সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। জেলার অভ্যন্তরীণ নদীপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বাগেরহাটে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর বীজতলা
বাগেরহাটে টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ধানের বীজতলা। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি পানির নিচে চলে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বাগেরহাটে ৬৫ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে বোরো রোপণ করবেন কৃষকরা। বাগেরহাটে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুঁটকির জন্য সংগৃহীত মাছ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলে-মহাজনরা। বৃষ্টি স্থায়ী হলে দুবলার শুঁটকিপল্লীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন জেলেরা।
চরফ্যাশনে ২১৯ ঘর বিধ্বস্ত
মিধিলির তাণ্ডবে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ২১৯টি টিনের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে কয়েকশ গাছ। চরফ্যাশনের ইউএনও নওরীন হক বলেন, ঢালচর, চর কুকরিমুকরি, জাহানপুরসহ বেশ কিছু ইউনিয়নের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এতে ২১৯টি ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মোংলায় জাহাজে কাজ বন্ধ
মোংলা সমুদ্রবন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি ১৫টি বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য ওঠা-নামার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বন্দরে অবস্থানরত মার্চেন্ট শিপকে মুভমেন্ট করতে নিষেধ করা হয়।
হাতিয়ায় ৩১০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মিধিলির প্রভাব পড়েছে। জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ঘূর্ণিঝড়ে। উপকূলজুড়ে সড়কের বিভিন্ন অংশে গাছ ভেঙে পড়ে। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ফেনী-পরশুরাম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ
ফেনীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। শুক্রবারও তা অব্যাহত ছিল। এতে বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়ে। ফেনী-পরশুরাম সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলার প্রতিটি উপজেলায় হাজার হাজার হেক্টর আমন ধান জমিতে ঢলে পড়েছে বলে ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানিয়েছেন।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কক্সবাজার, বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা, মোংলা, নোয়াখালী, ফেনী প্রতিবেদক]