মানিকগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:১২ পিএম
জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় সাইজের পাঙাশ মাছ। প্রবা ফটো
নদীতে ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে পদ্মা-যমুনায় আবারও মাছ শিকারে নেমেছেন মানিকগঞ্জের জেলেরা। তবে ইলিশ মাছ তেমন না পাওয়া গেলেও ছোট-বড় সাইজের অনেক পাঙাশ মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। বাজারে ইলিশের চেয়ে দাম কম ও চাহিদা বেশি থাকায় ক্রেতারাও ঝুঁকছেন পাঙাশ কেনায়।
সম্প্রতি আরিচা ঘাট মাছের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকের খোলাতেই (আড়ত) কমবেশি ছোট-বড় পাঙাশ মাছ উঠেছে। তবে ইলিশ থাকলেও দাম বেশি। যেখানে এক কেজি সাইজের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা আর পাঙাশের কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
মৎস্য ব্যবসায়ী হিরু জানান, ১৪-১৫ দিন ধরে আড়তে বেশিরভাগ জেলে পাঙাশ মাছ নিয়ে আসছেন। আবার অনেকে বাগাড়সহ অন্যান্য মাছ। আইড়, বাগাড় ও পাঙাশ মাছের দাম প্রায় একই রকম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।
শিবালয় এলাকার নিতাই হলদার জানান, ছোট নৌকা নিয়ে গত বুধবার বিকালে সহকর্মী চারজনসহ নদীতে নামেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ছোট-বড় সাইজের ১৬টি পাঙাশ নিয়ে আড়তে আসেন। ইলিশ তেমন না পেলেও পাঙাশ মাছ পাওয়াতেও তাদের কষ্ট সফল হয়েছে। তারা ৫০ হাজার টাকার পাঙাশ বিক্রি করেছেন।
জেলে নীপেন হলদার জানান, প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০ জন করে জেলেসহ গোল্টিজাল নিয়ে সন্ধ্যায় তারা নদীতে নামেন। একবার নদীতে নামলে খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা। এবার ইলিশ খুবই কম পাওয়া গেলেও পাঙাশের আশায় নদীতে নামছেন। গোস্টিজালে ইলিশ, পাঙাশসহ সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়।
জেলে কার্তিক হলদার জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় একশ্রেণির জেলেরা নিষেধাজ্ঞা না মেনে অবাধে ইলিশ ধরেছে। এখন অভিযান শেষে শত শত জেলে নদীতে। ভাগ্য ভালো হলে ইলিশ-পাঙাশ দুটোই পাওয়া যাচ্ছে।
জেলে ধীরেন হলদার জানান, সব জেলেরাই এখন কিনারে এসে জাল পরিষ্কার করছেন। দুপুরের পর আবার নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আরিচা ঘাটের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী জামাল বলেন, ‘ভোর থেকেই আড়তে বসে আছি। এবার ইলিশের দাম অনেক বেশি। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, ছোট সাইজেরগুলো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।’
শিবালয় মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নদীতে ইলিশ মাছ একেবারেই কম থাকলেও এবার ভালো পাঙাশ পাওয়া যাচ্ছে। তাই ইলিশ মাছ না পাওয়া গেলেও পাঙাশে পুশিয়ে যাচ্ছে।
হরিরামপুর উপজেলা মৎ্যে কর্মকর্তা নূরুল ইকরাম জানান, হরিরামপুরে পদ্মায় জেলেদের জালে বড় বড় বোয়াল, পাঙাশ, রুই, কাতল মাছ ধরা পড়ছে। গতকালও একটি ১২ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ ধরা পড়েছে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রামের জেলে আলম মিয়ার জালে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান জানান, ইলিশের এই প্রজননের মৌসুমে মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকরণে ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলমান ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ইলিশের মতো পাঙাশ, আইড়, বাগাড়সহ অন্যান্য মাছের পোনা ধরা যদি রোধ করা যায় তাহলে এসব মাছেরও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।