রেজাউল করিম, গাজীপুর
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২১:১২ পিএম
গাজীপুর মহানগরীর প্রায় সব উপজেলার বাজারগুলোয় নিষিদ্ধ পলিথিনের শপিং ব্যাগের বিক্রি ও ব্যবহার বেড়েছে। আইন করে পরিবেশ দূষণকারী পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর বেশ কিছুদিন ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি পলিথিন ব্যাগে সয়লাব হয়ে গেছে গাজীপুরের হাট-বাজার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর বাজার, চান্দানা চৌরাস্তা, ভোগড়া এলাকার দুটি কাঁচাবাজার, কোনাবাড়ি কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিনের ছড়াছড়ি। আগে ব্যবহৃত পলিথিন ব্যাগের সঙ্গে বর্তমানের ব্যাগের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আগের ব্যাগগুলোয় হাতল ছিল, এখনকার ব্যাগে হাতল নেই।
পরিবেশের সুরক্ষায় আইনের মাধ্যমে পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০০২ সালে। আইনে বলা হয়েছে, ‘পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা যাবে না। আইন অমান্য করে পলিথিন উৎপাদন করলে ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার করা হবে। এ ছাড়া যারা বাজারজাত করবে তাদের ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকাশ্যে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার হলেও এটি বন্ধে এ আইনের তেমন প্রয়োগ নেই।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি মনির হোসেন বলেন, পলিথিনের ব্যাগ একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। যা ড্রেন, সুয়ারেজ, নালা-নর্দমা, খাল ও ডোবায় গিয়ে পড়ছে। পলিথিনের কারণে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিছুদিন আগের টানা বৃষ্টিতে গাজীপুর শহরসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। পরিবেশ রক্ষায় পালিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে, যা থেকে ডায়রিয়া ও আমাশয় হতে পারে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়।
পরিবেশবিদ আসাদুল ইসলাম বলেন, উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্মপ্রদাহের সৃষ্টি হয়। পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। মাটির উর্বরতা কমে যায় এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে সমস্যা হয়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পলিথিন তৈরির কারখানাগুলো অধিকাংশই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। সেখান থেকেই বেশিরভাগ পালিথিন গাজীপুরে প্রবেশ করে। গাজীপুরের টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকায় কিছু কারখানা আছে। পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে একটি শক্তিশালী গ্রুপ কাজ করছে।
পলিথিন ব্যবহারকারীরা জানান, কোন কিছু কেনার পর দোকানিরা পলিথিন ব্যাগে ভরে দেয়। পলিথিনের বিকল্প কোন ব্যাগ তেমনভাবে হাট-বাজারগুলোয় পাওয়া যায় না। যার কারনে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এছাড়া পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ থাকলেও তার মূল্য বেশি বিধায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষেরই আগ্রহ কম।
জয়দেবপুর বাজারের ব্যবসায়ী বিক্রেতা খায়রুল ইসলাম বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ। কিন্তু এর বিকল্প যে ব্যাগ পাওয়া যায় তার দাম বেশি। তিনি আরো বলেন, ঢাকার চক বাজার, ইমামগঞ্জ, গাজীপুর সদর থেকে তারা হাতল ছাড়া পলিথিন কিনে আনেন ক্রেতাদের পণ্য দেওয়ার জন্য।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নয়ন ভূইয়া বলেন, গাজীপুরের টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক পালিথিন ও পলিথিন তৈরির কাচামাল জব্দ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। এবার বাজারগুলোয় অভিযান পরিচালনা করবো।