চট্টগ্রাম অফিস ও রাঙ্গুনিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৩ পিএম
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২০:০৯ পিএম
আমন ধানের বাম্পার ফলন। প্রবা ফটো
চলতি বছর আমন মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পানিতে ডুবে ছিল চট্টগ্রামের অধিকাংশ কৃষিজমি। বন্যা পরিস্থিতির পর দেখা দেয় পোকার উপদ্রব। ফলে আমনের ফলনে ক্ষতির শঙ্কায় ছিল চাষিরা। মৌসুমের শেষে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। সব আশঙ্কা দূর করে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে চট্টগ্রামে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। অধিকাংশ জায়গায় শুরু হয়েছে ধান কাটা। ফসলের মাঠে হলুদাভ সবুজের স্নিগ্ধ দোলা বার্তা দিচ্ছে জমজমাট এক নবান্নের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো। এই সাফল্যকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক তদারকির ফল মনে করছেন কর্মকর্তারা। অক্টোবরের মাঝামাঝি বৃষ্টিকে আশীর্বাদ মনে করছেন কৃষকরা।
চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে কয়েক বছর ধরেই কৃষি উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন সাংবাদিক সালেহ নোমান। ‘হিউম্যান ২৫’ নামে একটি দল গঠন করে সেখানে চাষাবাদ করছেন তিনি। এবার পাঁচ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছে দলটি। যার মধ্যে এক হেক্টরে নিজেই চাষ করেছেন নোমান। তার ভাষ্যমতে, কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি ধান হয়েছে। নোমান বলেন, ‘এবার অক্টোবরের মধ্যভাগে বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত ওই সময় বৃষ্টি হয় না। বৃষ্টির কারণে জমিতে লবণাক্তের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। এ কারণে ফলন ভালো হয়েছে।’
চলতি বছর মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চাষ হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয় ২৪ হাজার ২৬২ হেক্টর জমিতে। বাকি ৭ হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে হয়েছে হাইব্রিড জাতের ধান। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সাধারণত প্রতি হেক্টরে হাইব্রিডে ৪ টন, উচ্চফলনশীলে ৩ টন ও স্থানীয় জাতের চাষে ১ দশমিক ৭৫ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সে হিসাবে এবার আমন মৌসুমে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৪ টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরেজমিনে গিয়েও দেখা গেছে আমনের বাম্পার ফলনের চিত্র।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রায় তিন হাজার হেক্টর আয়তনের গুমাই বিল শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত। চলন বিলের পর দেশের সবচেয়ে বড় কৃষি বিল এটি। প্রচলিত আছে, এই বিলে উৎপাদিত এক মৌসুমের ধান দিয়ে দেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গুমাই বিল পাকা ধানের সোনালি আভায় আলোকিত। কেউ ধান কাটছে আবার কেউ মাড়াইয়ে ব্যস্ত। মাঠে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ত কৃষাণীরাও। কৃষক রমিজ উদ্দিন এবার দুই হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করেছেন। ধান কেটে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, ’এবার শ্রমিকের দাম আগের তুলনায় বেশি। কানি (২৪ কাঠা) প্রতি ধান কাটা তিন হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ধান ভালো হয়েছে, ন্যায্য দামটা পেলে খরচ বাদ দিয়ে ভালোই লাভ হবে।’
ফলন সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান বলেন, ‘এবার চাষ হয়েছে বেশি। ফলনও ভালো। বাকিটা ফলন তোলার পরে বলতে পারব। আশা করি, ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।’
আমন ধানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নবান্ন উৎসব। সাধারণত বাংলা পঞ্জিকার অগ্রহায়ণ অর্থাৎ হেমন্তকালে আমন ধান কাটার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আমনের বাম্পার ফলনের কারণে এবার জমজমাট নবান্নের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। সালেহ নোমান বলেন, ‘প্রতিবার ছোট পরিসরে নবান্ন করি। এবার বেশ বড়সড় আয়োজন করে নবান্ন করব ডিসেম্বরের শেষ দিকে।’