জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৪১ পিএম
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৫২ পিএম
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের বহলবাড়িয়া, চাঁদপুর ও বাঁশআড়া বিলের খাল দখল করে কেউ মাছ চাষ করছেন, আবার অনেকে গড়েছেন বসতি। এতে জলাবদ্ধতার শিকার প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা কৃষিজমি। ওই জমিতে বছরে একবার চাষাবাদ হলেও সাত-আট মাসই থাকে হাঁটুপানির নিচে। বিলের এই বিপুল জমি দীর্ঘদিন এভাবে অনাবাদি থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ছয় হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, বিলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে থইথই পানি। কচুরিপানা, কলমি, শাপলা ফুলসহ নানা আগাছা জন্মেছে। নিজ নিজ জমিতে কৃষকরা আগাছা পরিষ্কার করছেন। বাঁশের চাই, অবৈধ কারেন্ট জাল ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন কয়েকজন শৌখিন শিকারি। বিলের মাঝে কয়েকটা পুকুর কাটা রয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি।
বহলবাড়িয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন জানান, ছয়-সাত বছর আগেও বিলের পানি নন্দলালপুর ইউনিয়নের ময়েনমোড়-ভবানীপুর সড়কের পাশের খাল দিয়ে বোর্ড অফিস খাল হয়ে এবং ময়েনমোড়-এলংগী রেলসেতু খাল হয়ে গড়াই নদে যেত। সে সময় প্রায় সারা বছরই এই জমিতে চাষাবাদ হতো। কৃষকরা বছরে দুই-তিন বার ফসল ঘরে তুলতেন। পরে ময়েনমোড়-ভবানীপুর সড়কের পাশের খাল বন্ধ করে প্রভাবশালীরা পুকুর খনন করেছেন, কেউ বানিয়েছেন ঘরবাড়ি।
বহলবাড়িয়া এলাকার কৃষক জসিম মন্ডল জানান, বিলে তার দুই বিঘা জমি রয়েছে। বর্গা নিয়ে চাষ করেন আরও দুই বিঘা। আগে এই জমিতে তিনি বছরে দুবার ফসল ফলাতেন। কিন্তু এখন কোনোমতে এক ফসল চাষ হয়। এতে তার খুব ক্ষতি হচ্ছে।
ভবানীপুরের কৃষক কাদের মন্ডল বলেন, সংস্কারের অভাবে ময়েনমোড়-এলংগী রেলসেতু খালটি অনেকাংশে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বর্ষার পানি আটকা পড়ে বিলের জমি বছরের সাত-আট মাস হাঁটুপানির নিচে থাকে।
নন্দলালপুর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। এর সাথে অনেক কৃষকের ভাগ্য জড়িত। তিনি খাল খননের জন্য উপজেলা প্রশাসন, কৃষি অফিসকে জানিয়েছেন।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম জানান, তিনটি বিলে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে সেখানে বর্তমানে মাত্র চার হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। পানি বের করা গেলে আরও ছয় হাজার টন ফসল উৎপাদন হতো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জমি মালিক, কৃষি বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সকলে ঐকমত্যে পৌঁছলে সরকারি প্রকল্পের আওতায় খাল খনন করা হবে।