× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অবশেষে শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে শিশু নাঈম

মৌলভীবাজার প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৪ পিএম

আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৭ পিএম

অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে নাঈম উর রহমান। মঙ্গলবার সকালে দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রবা ফটো

অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে নাঈম উর রহমান। মঙ্গলবার সকালে দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রবা ফটো

অবশেষে শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি মিডিয়ামের নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈম উর রহমান। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে প্রায় ১৪ মাস পর আনন্দচিত্তে সে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘ দিন পরে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পেরে উৎফুল্ল শিশুটি। তার বাবা আব্দুর রহমানের চোখে-মুখেও আনন্দের ঝিলিক। এদিন সকাল ১০টায় শিশু নাঈম স্কুলের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলমের হাত ধরে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠীরা তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। 

এর আগে সোমবার নাঈমকে স্কুলে পাঠাতে তার পরিবারকে চিঠি দেন বিদ্যালয় প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলম। নাঈমের মা ডা. নাদিরা খানমকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার ছেলে নাঈম উর রহমানকে ১৪ নভেম্বর থেকে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার অনুমোদন দেওয়া হলো। ১৩ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য আপনার ছেলেকে ১৪ নভেম্বর স্কুলে পাঠনোর অনুরোধ করা হলো।’

ফিনলে টি কোম্পানির বালিশিরা মেডিকেল ডিপার্টমেন্টের ইনচার্জ ডা. নাদিরা খানম ও ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান দম্পতি তাদের যমজ শিশু সন্তান নাঈম উর রহমান ও নাজিফ উর রহমানকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নার্সারি ওয়ানের বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করেন। স্কুলের অধ্যক্ষসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট ভর্তি কমিটি তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার পর ওই বছরের জুন মাস পর্যন্ত তারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেন। জুলাই মাসে তাদের ওই স্কুলেরই ইংলিশ মিডিয়ামে পুনরায় ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি করা হয় এবং তারা একসঙ্গে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়। ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘স্কুলের উপযোগী নয়, কথা বলতে পারে না, পেন্সিল ধরতে পারে না, পড়াশোনায় মনোযোগী না এবং তার দুষ্টুমির কারণে অন্য শিশুদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে’–নানা অজুহাতে শিশু নাঈমকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। 

নাঈম ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্কুলের পোশাক পরে, স্কুল ব্যাগ নিয়ে যমজ ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলের গেট পর্যন্ত আসে এবং বিষণ্ন মনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে স্কুলের প্রধান গেটে। ফলে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্থকর অবস্থায় পড়ে। বারবার শিশুটির অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাননি। বাধ্য হয়ে নাঈমের বাবা আব্দুর রহমান চলতি বছরের ৫ মে স্কুল কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস পাঠান। স্কুল কর্তৃপক্ষ ২২ মে নোটিসের জবাব দেয়।

পরে শিশুটির বাবা আব্দুর রহমান ২৬ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ১ অক্টোবর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ২ অক্টোবর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এ নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার ১৮ অক্টোবর সংখ্যার ৮ম পৃষ্ঠায় ‘কেন স্কুলের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে শিশু নাঈম’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গত ৮ নভেম্বর শিশু শিক্ষার্থী নাঈম উর রহমানকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে ও তার ওপর চলমান মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের ১১ জন সিনিয়র আইনজীবী শিক্ষা সচিব, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিস পাঠান। নোটিস পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে শিশু নাঈমের ওপর চলমান অমানবিক ও মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করতে এবং তাকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় নোটিসদাতারা উচ্চ আদালতের দারস্থ হবেন বলে উল্লেখ করেন। এ নিয়ে ৯ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ‘এখনও শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারেনি শিশু নাঈম’ শিরোনামে সচিত্র ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গত রবিবার (১২ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি নিয়ে দি বাডস্ রেসিডেনসিয়্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে শোকজ করা হয়। শোকজে তিন কার্যদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না দিলে অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এ নিয়ে সোমবার (১৩ নভেম্বর) স্কুলে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সভা। সভায় শিশু নাঈমকে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সভা শেষে বিকালেই চিঠি পাঠানো হয় শিশুটির অভিভাবককে। চিঠি পেয়ে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে শিশু শিক্ষার্থী নাঈম শ্রেণিকক্ষে ফিরে যায় এবং স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়।

এ ব্যাপারে দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) আমাদের বোর্ড অব গভর্নরসের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তাকে (শিশু নাঈম) শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরিয়ে নিয়েছি। আমি অতীতের বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি নই।’

নাঈমের বাবা মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলের শিক্ষাজীবন থেকে ১৩ মাস ২৫ দিন চলে গেল। সে শিক্ষাজীবনের শুরুতেই পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্থকর অবস্থায় ছিল। আমি ও আমার স্ত্রীও মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছি। আজ (মঙ্গলবার) সে পুনরায় শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আনন্দিত। তাকে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নিতে আইনজীবীরাসহ যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবীর আইনি নোটিস এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে চিঠি পাওয়ার পর আমি গত রবিবার শ্রীমঙ্গল গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছি। সমস্যার সমাধানে বাডস্ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। অবশেষে সমস্যার সমাধান হওয়ায় ভালো লাগছে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘বাচ্চাটি প্রতিবন্ধী নয়, তবে তার কথা বলায় কিছুটা সমস্যা আছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুটি শ্রেণিকক্ষে ফিরে গেল। তার ব্যাপারে প্রায় তিন ঘণ্টা মিটিং করে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শ্রেণিকক্ষে ফেরানো হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা