মোহন আখন্দ, বগুড়া
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১০:২০ এএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০৭ পিএম
গ্রেপ্তার এড়াতে রাত নামলেই এভাবে ফসলের মাঠে আশ্রয় নেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ার শেরপুরে বিএনপি নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে রাতে বাড়িঘর ছেড়ে ফসলি জমিতে কিংবা সেচযন্ত্র বসানে ঘরে অবস্থান করছেন। তারা বলছেন, দলের ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে হলে গ্রেপ্তার এড়াতে হবে। আর তাই শত কষ্ট হলেও তারা এ কৌশল নিয়েছেন। পুলিশ বলছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের ফসলের মাঠে রাত যাপনের তথ্য তাদের কাছে নেই।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে পুলিশ বাড়ি বাড়ি রাতে তল্লাশি করছে বলে ঘরছাড়া বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলছেন, দিনের বেলা তারা প্রত্যেকেই হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে সড়ক-মহাসড়কে সক্রিয় থাকেন। দিনের আলোতে পুলিশও মহাসড়ক ছাড়তে চায় না। কিন্তু রাত নামলেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার অভিযানে গ্রামে গ্রামে ঢুকে পড়েন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবলুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ জুলাই বগুড়ায় অনুষ্ঠিত পদযাত্রা কর্মসূচির দিন থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ৪ মাসে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ১৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শেরপুরে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের অন্তত ৩০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত আরও ১৪জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘পুলিশ এবার গ্রাম, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে বেশি তৎপর। রাত হলেই তারা গ্রামে গ্রামে তল্লাশিতে নেমে পড়ছে। যে কারণে আমাদের বাড়িঘর ছেড়ে ফসলি জমিতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। গ্রেপ্তার এড়াতে গত রবিবার (১২ নভেম্বর) রাতে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের মাঠে শ্যালো মেশিনের (অগভীর নলকূপ) ঘরে শুয়ে-বসে রাত কাটিয়ে দিয়েছি। কাছাকাছি মাঠেই ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ভবানীপুর ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু বক্কার, আল কাফি, সদস্য ছামিদুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম।
শেরপুর উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নজরুল ইসলাম জাকি জানান, শুধু ভবানীপুরই নয় উপজেলার যে ১০টি ইউনিয়ন আছে তার প্রতিটিতেই নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে বাধ্য হয়ে রাতে ফসলের মাঠে অবস্থান করছেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি ইউনিয়নে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের অন্তত ২০০ নেতাকর্মী ঘর ছেড়ে এভাবে বাইরে রাত কাটাচ্ছেন। সেই হিসেবে প্রতি রাতে ১০টি ইউনিয়নের অন্তত ২ হাজার নেতাকর্মী মাঠে অবস্থান করছেন।
মাঠে রাত যাপনের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভবানীপুর ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘সন্ধ্যা হলেই আমরা ৪/৫জন করে একটি গ্রুপ করে মাঠের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি। বিছানাপত্র বহন করতে সমস্যা হয় বলে আমরা সেগুলো রাখি না। এমনকি বাড়তি কোনো কাপড়চোপড়ও নেই না। খড়ের ওপর একটি পলিথিন বা কাগজজাতীয় কিছু পেতে আমরা শুয়ে পড়ি। অর্ধেক রাত পর্যন্ত আমরা আন্দোলনের কৌশল নিয়েই আলাপ-আলোচনা করি। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য খড়ে আগুন দিয়ে একটু ধোঁয়া সৃষ্টি করে নিই। এরপর ভোর রাতের দিকে হয়তো মাথার নিচে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কতদিন এভাবে থাকতে হবে জানি না। কিন্তু দলের ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচিকে সফল করতে হলে গ্রেপ্তার এড়াতেই হবে। আর সেটি করতে হলে আমাদের বাড়িঘর ছেড়ে থাকতে হবে।’
শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আঁশবাড়িয়া গ্রামের অগভীর নলকূপের অপারেটর কাম মালিক ইউসুফ উদ্দিন জানান, পুলিশ তাড়া করলেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা তার মেশিন ঘরে রাত কাটায়। পাশের কুসুম্বি ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন এবং মোজাম্মেল হোসেনও একই কথা জানিয়েছেন।
তবে রাতে বাড়িঘর ছেড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফসলের মাঠে রাত যাপনের খবর পুলিশ জানে না বলে দাবি করেছেন বগুড়ার শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব পুরোনো মামলা। নতুন করে কোনো মামলা হয়নি।’ এখন পর্যন্ত কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা রেকর্ড দেখে বলতে হবে।’