× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘খাল না কাটলে ভাত মিলব না’

ধামরাই (ঢাকা) সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:০৫ পিএম

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১২ পিএম

পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া এলাকার ভায়াডুবি বিল। ছবিটি রবিবারের তোলা। প্রবা ফটো

পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া এলাকার ভায়াডুবি বিল। ছবিটি রবিবারের তোলা। প্রবা ফটো

‘আগে বন্যা-বৃষ্টির কারণে চার মাস পানি জমে থাকত। তারপর সেই পানি খাল হয়ে নদীতে পড়ত। কিন্তু এখন কারখানা হয়ে খালের মুখ বন্ধ। তাই পানি যায় না। ধানের জমি পানির তলে। খাল না কাটলে ভাত মিলব না।’ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় এভাবেই সামনের দিন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন মিনহাজুল ইসলাম।

ঢাকার ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া এলাকায় ভায়াডুবি বিলে তিন বিঘা জমির মালিক তিনি। এই জমিতে কয়েক মাস পানি জমে থাকলেও দুই মৌসুমে ধান ফলাতেন। সেই ধানেই সারা বছরের খোরাক হতো। তবে এ বছর চাষের মৌসুম চললেও জমি এখনও পানির নিচে। এ কারণে চাষবাস বন্ধ। শুধু মিনহাজুল নয়, একই অবস্থা এই এলাকার কয়েকশ কৃষকের। পানির নিচে থাকা জমিতে দাঁড়িয়ে হাহাকার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাদের। 

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া, নাগরাইল ও জয়পুরা এলাকায় ভায়াডুবি বিল ও নাগরাইল বিলের অবস্থান। দুটি বিলে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি। প্রতি বছর কার্তিক মাসে বিল দুটিতে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। পরের তিন মাসে (অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ) পানি নেমে যায়। তখন চাষাবাদ করত তারা।

নাগরাইল বিল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে ফুকুটিয়া এলাকার বংশী নদীর পানি ডাউটিয়া দিয়ে এই বিল দুটি হয়ে দক্ষিণের প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের একই ইউনিয়নের কাইটামারা এলাকায় গাজীখালী নদীতে পড়ে। সেখান থেকে পানি চলে যায় সাভারের বংশী নদীতে। তবে গত কয়েক বছরে এসব বিলের উত্তর ও দক্ষিণের প্রবেশমুখে গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্প-কারখানা। এতে পানির গতিপথ বন্ধ হওয়ায় বিলের পানির চলাচলেও বাধার সৃষ্টি হয়েছে। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের টানা বৃষ্টিতে বিল দুটিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও পানি কমছে না। 

ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে

ডাউটিয়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক লেহাজ উদ্দিন বলেন, ‘এই বিলে ১৮০ শতাংশ জমি আমার। এখানে চাষ করেই সারা বছরের ধান-চাল পেতাম। সরিষা আবাদ করতাম আরেক মৌসুমে। কিন্তু এই মৌসুমে সব জমি পানির তলে। এখন ধানের চারা রোপণের সময় যাচ্ছে। আগামী বছর কী খাব জানি না। কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

আনছার আলী, শহীদুল ইসলাম নামে স্থানীয় দুই বাসিন্দা জানান, এমনিতে সারা বছর চাষবাস করতেন তারা। তবে এ বছর জমি চাষের উপায় নেই। তাই পাশের একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করছেন। তারা বলছেন, অবিলম্বে এই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে তাদেরসহ আরও অনেকেরই জীবিকা বন্ধ হয়ে পড়বে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।

গতকাল রবিবার সরেজমিনে খাল দুটির গতিপথের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুকুটিয়া এলাকায় বংশী নদী থেকে বিল দুটিতে পানি চলাচলের মুখে গড়ে উঠেছে একাধিক পোশাক কারখানাসহ ছোটবড় স্থাপনা। আর অপরদিকে ডাউটিয়া এলাকায় বিলের গতিপথে গড়ে উঠেছে সুতা কারখানা, ব্লক কারখানাসহ একাধিক কারখানা। 

পানিপ্রবাহ বন্ধের বিষয়ে জানতে ডাউটিয়া সেতুর উত্তর পাশে গড়ে ওঠা এমএএইচ স্পিনিং মিলের পরিচালক আতিকুল ইসলাম ও পার্শ্ববর্তী বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা উভয়েই দাবি করেন, পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছেন। যদিও দুটি কারখানার সামনে গিয়েই বিলের গতিপথের ওপর কারখানার স্থাপনা দেখা গেছে। বিল্ডিং টেকনোলজির পাশে দুই বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য ১০ ইঞ্চি পরিমাণ পাইপ থাকতে দেখা গেছে। আর ডাউটিয়া এলাকায় খালের গতিপথে ব্যাটারি কারখানায় কোনো নিষ্কাশনব্যবস্থা দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে জানতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি।

ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে

তবে বিলের জলাবদ্ধতা দূর করতে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে আশপাশের পাঁচ গ্রামের কৃষকের জমির চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এলাকাটি দুবার পরিদর্শন করেছেন। ইউএনওর সঙ্গেও কথা বলেছি। এটি খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে কৃষকদের দুর্ভোগ শেষ হবে না।’

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। সামনে রবি মৌসুম আসছে। যদি কোনো স্থাপনার জন্য মাঠের পানি নামায় বিঘ্নিত হয়, তাহলে দ্রুত নিষ্কাশন করে চাষের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করব।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা