× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর

৫৩ বছর পরেও ভোলা সেই ঝুঁকিতেই

ভোলা সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৪৫ এএম

আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। ভোলাসহ উপকূলবাসীর বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। ১৯৭০ সালের এই দিনে বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ক্ষতবিক্ষত করে দেয় বিভিন্ন এলাকার জনপদ। উপকূলীয় জনপদগুলো মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে দেয়। ওই ঝড়ে ভোলায় হারিয়ে যায় দেড় লক্ষাধিক প্রাণ। নিখোঁজ হয় সহস্রাধিক মানুষ।

এক এক করে ৫৩ বছর পেরিয়ে গেল। আজও কান্না থামেনি স্বজনহারা মানুষের। রয়ে গেছে সেই ক্ষত। কিন্তু এত বছর পরও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় ভোলায় প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ আজো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

সরেজমিনে ভোলার বিভিন্ন দুর্যোগপ্রবণ এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর দিনভর ছিল গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস। সন্ধ্যার পর মুহূর্তের মধ্যেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে থাকে ঝড়। গভীর রাতে শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। হারিকেনরূপী জলোচ্ছ্বাসের সময় ঝড়টি ভোলাসহ উপকূলীয় ১৮ জেলায় আঘাত হানে। তৎকালীন সময় তথ্যপ্রযুক্তি অনেকটা দুর্বল থাকায় উপকূলের অনেক মানুষই ঝড়ের পূর্বাভাস পায়নি।

এ সময় তিন দিকে নদী ও এক দিকে সাগরবেষ্টিত দ্বীপজেলা ভোলায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায়। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, খাল-বিল, নদী-নালায় ভাসছিল লাশ আর লাশ। এমনকি গাছের সঙ্গে ঝুলে ছিল শত শত মৃতদেহ। বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনের লাশ খুঁজেও পায়নি। তখন বাঁচতে কেউ গাছের ডালে, কেউ উঁচু ছাদে আশ্রয় নিয়ে কোনোমতে প্রাণে রক্ষা পেলেও ১০ দিন পর্যন্ত তাদের প্রায় অভুক্ত কাটাতে হয়েছে। গত ৫২ বছরের সবকটি ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ১৯৭০ সালের ঝড়টি সবচেয়ে হিংস্র বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এ সময় কথা হয় জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউনুস সর্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আবদুর রশীদ মৃধা বাড়ির ৪০ জন সদস্যের মধ্যে সেদিনের ঝড়ে তিনজন বাদে বাকি সবাই প্রাণ হারান। সেদিনের বিভীষিকাময় দৃশ্য মনে করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

একই উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের দুদু মিস্ত্রি বাড়ির আবুল কাসেম জানান, সেদিন ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের পানি সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। রাস্তায়, গাছে, ফসলের মাঠে হাজার হাজার মানুষ, গরু, ছাগল, পশুপাখির মরদেহ পড়ে ছিল। এক গর্তে একসঙ্গে কবর দেওয়া হয় একাধিক লাশ। এমনকি অনেকের লাশও খুঁজে পাননি স্বজনরা।

প্রলয়ংকরী সেই বীভৎস ঝড়ের তাণ্ডবের খবর ঘটনার চার দিন পর তখনকার পূর্ব দেশ পত্রিকায় প্রকাশ হলে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী জানতে পারে। প্রত্যক্ষদর্শী তৎকালীন পূর্ব দেশ পত্রিকার ভোলার সাংবাদিক ও বর্তমান ভোলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি ঝড়ের পরে শিবপুরে গিয়ে দেখেন লাশ আর লাশ। পুকুর পাড়ে, রাস্তায়, গাছে আর নদীতে লাশের মিছিল।

সেই তাণ্ডবের খবর চার দিন পর পূর্ব দেশ পত্রিকায় ‘ভোলার গাছে গাছে ঝুলছে লাশ’ শিরোনামে ছাপা হয়। তার পরই সারা দেশসহ বিশ্ববাসী জানতে পারে। জানা যায়, উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয় দ্বীপজেলাটিতে। এ সময় ভোলার এক-তৃতীয়াংশ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়। ১২ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসটি কেড়ে নিয়ে যায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ।

ভোলার মানুষকে প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করে চলতে হয়। চর জহিরুদ্দিন, চর মোজাম্মেল, কলাতলীর চর, চর নিজাম, ঢালচর, কুকরি-মুকরি, চর পাতিলাসহ জেলার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কম হওয়ায় কয়েক লাখ মানুষ চরম ঝুঁকিতে বাস করছে। এ অবস্থায় ভোলায় যে পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই যেকোনো দুর্যোগ এলেই চরাঞ্চল থেকে মানুষকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে মূল ভূখণ্ডে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে হয়। আবার অনেকে চরম ঝুঁকি নিয়ে চরেই বসবাস করে।

তবে ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় বর্তমানে ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি ১২টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোলায় ১৩ হাজার ৮০০ সিপিবি কর্মী দুর্যোগকালে মাঠে কাজ করেন। দুর্যোগপ্রবণ ভোলায় দুর্যোগ প্রতিরোধে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি। সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আমরা এখন সক্ষম।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা