মিঠাপুকুর (রংপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫৫ পিএম
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ২২:০২ পিএম
‘আমি দুই হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। চক্রবৃদ্ধি হারে তা ৬০ হাজার টাকা হয়েছে বলে তারা একসময় জানায় আমাকে। আমি তিন লাখ টাকার ওপরে সুদ দিয়েছি। কিন্তু তাদের দাবি, এখনও তারা আমার কাছে চার লাখ টাকা পাবে।’ এভাবেই সমবায় সমিতির নামে সুদের কারবারিদের নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন রংপুরের দেলোয়ার হোসেন নামে এক দিনমজুর।
এমনকি সুদের টাকা আদায়ের জন্য এক নারীর কিডনি পর্যন্ত বের করে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তাকে নগ্ন করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে ও জামাতাকেও নির্যাতন করা হয়েছে। তা ছাড়া তাদের ফাঁদে ইতোমধ্যে সুদের বোঝা টানতে টানতে কেউ কেউ হারিয়েছেন শেষ সম্বল মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু। অমানুষিক অত্যাচারে বাড়িছাড়া হয়েছে অনেক পরিবার।
জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এমন অত্যাচারের তথ্য মিলেছে। এ ঘটনায় শনিবার (১১ নভেম্বর) মিঠাপুকুর থানায় মামলা হয়েছে। আসামিরা হলেন ইউনিয়নের বেতগাড়া গ্রামের মো. মকবুল হোসেনের দুই ছেলে মো. বেলাল হোসেন ও মো. জালাল হোসেন, হেলাল মিয়ার ছেলে মো. সোহাগ মিয়া ও মো. মিলন মিয়া নামে এক ব্যক্তি। সমবায় অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এমন নৈরাজ্য।
ইউনিয়নের নাটাগাড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার বসতভিটা ছাড়া কিছু নেই। আমাকে তুলে নিয়ে গেলে আমার শাশুড়ি ছালেহা বেগম আমাকে উদ্ধার করে। তিনি টাকা দিতে না পারায় বাজার ভরা লোকের সামনে আমাকে ও আমার কলেজপড়ুয়া শ্যালিকাকে মারধর করে।’
মামলার এজাহার থেকে এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনিয়নের ভাংনী বাজার, বেতগাড়া, নাটাগাড়ি, মাঠের হাট, হাজিরহাটসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ও বাজারে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন ছাড়াই ভিন্ন ভিন্ন নামে সমবায় সমিতি চালান আসামিরা। সমিতির নামে চড়া সুদে ঋণ দিয়ে জোরপূর্বক আদায় করা হয়।
দেলোয়ারের শাশুড়ি ছালেহা বেগম বলেন, ‘বাবা আমরা গরিব মানুষ। আমার স্বামী রুটির বেকারিতে কাজ করে। জামাইয়ের টাকার জন্য আমাকে তারা উলঙ্গ করে মেরেছে। আমার কলেজপড়ুয়া মেয়েটাকেও তারা ছাড়েনি। শেষে মিলনের হুকুমে তার ছেলেপেলে আমার কিডনি বের করতে চেয়েছিল। তাদের আঘাতে আমার কিডনির ওপরের মাংসপেশিতে রক্ত জমাট বেঁধে টিউমার আকৃতি ধারণ করেছে।’ ডাক্তার তাকে অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তার সেই সামর্থ্য নেই। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর আপস-মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে পুলিশ ২৬ দিন ঘুরিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানার জন্য আসামিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও দেখা পাওয়া যায়নি। তারা মোবাইল ফোনেও সাড়া দেননি। মিঠাপুকুর উপজেলা সমবায় অফিসার মো. মাহবুব রানা জানান, সমবায় সমিতির নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কাজ করার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৌখিক অভিযোগ আমলে না নিলেও মামলার পর পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।’ এলাকাবাসী এসব সুদি কারবারিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।