× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বৈকন্ঠপুর চা-বাগান

টিলা কেটে মাছ-সবজি চাষ হুমকিতে পরিবেশ

মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৫১ এএম

হবিগঞ্জের মাধবপুরের বৈকন্ঠপুর চা-বাগানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমিতে চায়ের পরিবর্তে চাষ হচ্ছে মাছ ও সবজি। প্রবা ফটো

হবিগঞ্জের মাধবপুরের বৈকন্ঠপুর চা-বাগানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমিতে চায়ের পরিবর্তে চাষ হচ্ছে মাছ ও সবজি। প্রবা ফটো

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় ৯৫৫ একরের বিশাল বৈকন্ঠপুর চা-বাগান। এই বাগান লিজ নিয়ে নিয়মবর্হিভূতভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য ও কৃষি প্রকল্প। আর প্রকল্পের নামে ইজারা দিয়ে আয় করছে লাখ লাখ টাকা। ফলে বাগানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূমি চা-চাষের পরিবর্তে মাছ ও সবজি চাষ হচ্ছে। নির্বিচারে টিলা কেটে সমতল ও জলাশয় বানানো হচ্ছে। প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন এবং পুরাতনÑ এ দুই ধরনের চা-বাগান রয়েছে। ১৯৫০ সালের আগের চা-বাগানগুলোকে পুরাতন এবং পরের বাগানগুলোকে নতুন বাগান হিসেবে ধরা হয়। পাহাড়ি জমি, কৃষি ও অকৃষি জমি, টিলা, খাসজমি এবং চা-চাষ করা যাবেÑ এমন জায়গাকে চা-বাগানের জমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশের বেশিরভাগ চা-বাগান ১৯৫০ সালের আগের জমিদারি, রায়তি ও প্রজা সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সেই হিসাবে ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বৈকন্ঠপুর চা-বাগান পুরাতন বাগান। বাগানটির ইজারা নিয়েছে বাংলাদেশ প্লান্টেশন লিমিটেড, ব্যবস্থাপনায় রয়েছে আমানত শাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফার্মÑ ২ ফার্ম ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। তাদের ইজারার মেয়াদ শেষ হবে ২০৪০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। 

সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, পুরাতন চা-বাগানের জমি যে বা যারা ইজারা নেবেন, তাকে ভূমি উন্নয়ন কর হিসেবে সরকারকে বাৎসরিক একর প্রতি (এক একরে তিন বিঘা) ৩০০ টাকা মূল্য পরিশোধ করতে হবে। কোনোভাবেই শ্রেণি পরির্তন বা সাবলিজ দেওয়া যাবে না। 

এ ছাড়া বাংলাদেশ চা বোর্ড ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ইজারা নির্দেশনানুযায়ী, চা-বাগানের বরাদ্দকৃত ভূমিতে চা-চাষ ব্যতীত অন্য কোনো ফসল চাষ বা কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে অনাবাদি জমিতে জেলা প্রশাসক ও চা বোর্ডের সুপারিশে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে কৃষিশিল্প গড়ে তোলা যাবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ব্যতীত কোনোভাবেই চা-বাগানের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। অভিযোগ রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই এখানে মাছ ও সবজির চাষ করা হচ্ছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, বাগান কর্তৃপক্ষ কোনোপ্রকার অনুমতি ছাড়াই বাগানে বড় আকারের অন্তত ৫টি পুকুর খনন করেছে। শুধু তাই নয় সেগুলো স্থানীয় মাছচাষিদের কাছে বাৎসরিক একর প্রতি তিন হাজার টাকা করে লিজ দেওয়া হয়েছে। ইজারা নিয়ে এক্সকাভেটর দিয়ে টিলা কেটে সমতল করে চাষের উপযোগী করে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছে অনেকে। নির্বিচারে টিলা কেটে সমতল করায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ছে। গত চার-পাঁচ বছর ধরেই টিলা কেটে এভাবে সমতল ও জলাশয় বানাচ্ছে। এখন দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সেখানে চা-বাগান বা টিলা ছিল। 

অবশ্য গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে স্থানীয়দের বক্তব্যের সত্যতাও পাওয়া গেছে। বাগান মালিকের আত্মীয় পরিচয়ে মো. আনিছ নামে একজন জানান, এই এলাকার শরীফ ভাই নামে একজন জায়গা ও পুকুরসহ একর প্রতি (বাৎসরিক) তিন হাজার টাকায় লিজ নিয়েছে। তিনি আবার অন্যদের সাবলিজ দিয়েছেন। নতুন করে লিজ নেওয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘আপনি ভদ্রলোক, কেন এসবের মধ্যে আসবেন। তবে একান্তই যদি লিজ নিতে চান তাহলে মালিক পক্ষের লোক মহিউদ্দিন স্যার চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া গেছেন, তিনি এলে দিতে পারব। কোনো অসুবিধা নাই।’

লিজ নেওয়ার কথা স্বীকার করে মো. শরীফ বলেন, ‘আমি দুই বছরের জন্য একর প্রতি (বাৎসরিক) তিন হাজার টাকা করে লিজ নিয়ে সবজি চাষ করছি।’ মো. সামছুদ্দিন নামে লিজ নেওয়া অপর একজন বলেন, ‘নতুন করে কিছু জায়গা নিছি। বর্তমানে এক্সকাভেটর দিয়া টিলা, গাছের গোড়া ও জঙ্গল পরিষ্কার করছি। শুধু আমি না এখানে স্থানীয় শরীফ, কামাল, কুতুব, জালালসহ অনেকেই লিজ নিয়ে সবজি চাষ করছে।’

বাগান ব্যবস্থাপক সামসুল হক ভুইয়া লিজ দেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ‘নামমাত্র টাকা নিয়ে স্থানীয় বেকারদের কাজে লাগিয়েছি। বাগানের সবজি দিয়ে আশপাশের এলাকার চাহিদা   মেটানো হচ্ছে।’ চা-বাগানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোকিছু চাষ করা যায় কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখেন বিষয়টি এভাবে না দেখে অন্যভাবে দেখেন। আসলে বাগানের মোট আয়তন ৯৫০ একর। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ একরে চা চাষ করছি। প্রতিবছর কোম্পানিরর দেড় কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এজন্য পতিত জমি স্থানীয়দের দিচ্ছি, তারা পরিষ্কার করে চাষাবাদ করছে। তাদের পরিষ্কার করা জায়গায় পরবর্তীতে সহজেই চা চাষ করা যাবে। এটা আমাদের একটা কৌশল।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘নীতিমালা বা আইন অনুযায়ী চা-বাগানের ভূমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। টিলা কেটে সমতল বা সাবলিজও দিতে পারবে না। এভাবে টিলা কাটলে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হবে। বাগান কর্তৃপক্ষের লিজ বাতিলসহ আইনের আওতায় আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান আহমেদ বলেন, ‘টিলা কাটা অবশ্যই অন্যায়। খোঁজ নিয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও চা-বাগান বার্ষিক কার্যক্রম মূল্যায়ন কমিটি সদস্য দেবী চন্দ মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) যোগাযোগ করতে বলেন। তিনি (ইউএনও) ব্যবস্থা না নিলে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। ইএনও মনজুর হাসান বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা