নাজমুল হুদা, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২৯ পিএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৯ পিএম
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে দুটি গ্রামীণ সড়কের কাজে বিভিন্ন অনিয়মসহ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না করার অভিযোগ উঠেছে। সড়ক দুটির কাজ শুরু করে দীর্ঘ এক বছরেও শেষ না করায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ওই এলাকাসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ।
কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (আইআর আইডিপি-৩)-এর আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলার চিলমারী উপজেলাধীন থানাহাট ফরেস্ট অফিস হতে রাজারভিটা পর্যন্ত ১ হাজার ১৭০ মিটার সড়ক পাকা করাসহ ২ ফুট মাপের ৩টি ইউড্রেন ও ৫ ফুটের ১টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় পলাশ শিমুল ট্রেডার্স নামক স্থানীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
যার চুক্তিমূল্য ছিল ৯৫ লাখ ২৫ হাজার ৬৭৯ টাকা এবং দিজেন্দ্রনাথের বাড়ি হতে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়ক পর্যন্ত ১ হাজার ২৬০ মিটার সড়ক পাকাকরণসহ ২ ফুট মাপের ৩টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় কুড়িগ্রামস্থ মেসার্স স্বপ্নীল এন্টারপ্রাইজ নামক অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার চুক্তিমূল্য ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৯ টাকা।
দুটি কাজই লটারিতে প্রাপ্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে কিনে নেন উলিপুর উপজেলাস্থ ঠিকাদার মফিজুল হক (জর্দা হাজী)। কাজ দুটি ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি করা হয়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফরেস্ট অফিস হতে রাজারভিটা সড়কের ডিপ গ্রামের মাসুদ মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত মাত্র ৭০০ মিটার এলাকায় সামান্য খোয়া ও বালু ফেলা হয়েছে। নয়াবাড়ী গ্রামে রাস্তার ধারে প্যালাসেটিংয়ের পরিবর্তে ড্রামের টিন বাঁশের খুঁটি দিয়ে লাগানো হয়েছে। সড়কের প্রস্থ ১০ ফুটের স্থলে ৭ ফুটে খোয়া ফেলা হয়েছে। সড়কটিতে ৩টি ইউড্রেন ও ১টি কালভার্ট নির্মাণের কথা থাকলেও এখনও সেসব করা হয়নি।
নয়াবাড়ী গ্রামের মোজাম্মেল হক জানান, তিনি ঠিকাদারের লোকদের ড্রামের টিনে বাঁশের পরিবর্তে কংক্রিটের খুঁটি লাগাতে বললে, তার সাথে ঠিকাদারের লোকজন খারাপ ব্যবহার করে।
একই এলাকার আবু বকর সিদ্দিক, সবুজ মিয়া, সেকেন্দার আলী, ডিপ গ্রামের দারোগ আলীসহ কয়েক বাসিন্দা বলেন, যেটুকু কাজ করা হয়েছে, তা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ সমাপ্ত না করায় পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অপরদিকে দিজেন্দ্রনাথের বাড়ি হতে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়টিতে সামান্য প্যালাসেটিং দিয়ে কয়েক গাড়ি বালু ফেলে রাখা হয়েছে। অপর প্রান্তে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়ক এলাকা থেকে মাত্র ৩০০ মিটার এলাকায় ইটের খোয়া ও বালু ফেলা হয়েছে। একটি কালভার্ট নির্মাণ হলেও এখনও বাকি রয়েছে দুটি। বিভিন্ন পুকুরের পাশে প্যালাসেটিং দেয়ার কথা থাকলেও ধীরেন্দ্রনাথের বাড়ির পুকুরে সামান্য প্যালাসেটিং দেওয়া হয়েছে, যা পানির নিচে পড়ে গেছে।
অধিকারীপাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলাম, বিনয় কৃষ্ণ বর্মণ, আতিকুর রহমান, ধীরেন্দ্রনাথ বর্মণ, সানোয়ার হোসেন বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সামান্য কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে।
দীনেশ চন্দ্র রায় বলেন, কাজ ভালো করার কথা বললে ঠিকাদারের লোক বলে শিডিউল দেখে আসেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মফিজুল হকের (জর্দা হাজী) বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
থানাহাট ফরেস্ট অফিস হতে রাজারভিটা পর্যন্ত কাজের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শের আলী জানান, কাজ ভালো করানোর জন্য খোয়া টেস্টে পাঠিয়েছি। টেস্টের ফলাফল এলেই কাজ শুরু হবে। সময় বাড়িয়ে নিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী ফিরোজুর রহমান জানান, কাজ দুটি মফিজুল হক জর্দা সাহেব কিনে নিয়েছেন। আমরা তাকে বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে কাজ করতে দেরি করেছেন। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে, সময় বৃদ্ধি করে শেষ করা হবে।