× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ধামরাইয়ে প্লাস্টিকের হস্তশিল্প দেখাচ্ছে নতুন সম্ভাবনা

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:০০ পিএম

আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৪২ পিএম

ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বেল্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে হস্তশিল্প পণ্য। প্রবা ফটো

ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বেল্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে হস্তশিল্প পণ্য। প্রবা ফটো

ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ফেলনা প্লাস্টিক থেকে তৈরি হস্তশিল্প পণ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে স্থানীয় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম বেল্ট। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ধান সংরক্ষণের গোলা, ঘরের চাল, বেড়া ও কবুতরের খোপসহ দৈনন্দিন ব্যবহার্য তৈজস।

ফেলনা প্লাস্টিক দিয়ে হস্তশিল্পের কাজ শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা বিশ্বনাথ চন্দ্র মনিদাস। মনিদাসের দেখাদেখি এমন আরও কয়েকটি পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। 

এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উপজেলার বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বেল্ট কেজিদরে কিনে আনেন। এরপর কারিগররা নিপুণ হাতে তৈরি করেন গৃহস্থালির ব্যবহার্য সামগ্রী। যার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে দূষণের হাত থেকে, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক। এসব পণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের নানা প্রান্তে।

কথা হয় উদ্যোক্তা বিশ্বনাথ চন্দ্র মনিদাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ৪ বছর আগে এই কাজ শুরু করি। আগে গরু লালন-পালন করতাম। সেখানে সুবিধা করতে পারিনি। এক দিন গার্মেন্টসের পরিত্যক্ত এই বেল্টগুলো দেখে ভাবনা আসে এগুলো দিয়েও বাঁশ বা বেতের মতো বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব। সেই থেকেই এ কাজের শুরু। বর্তমানে আমি স্বাবলম্বী। বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা থেকে এই পরিত্যক্ত বেল্ট কেজিদরে কিনে আনি। বেল্ট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য মান অনুযায়ী ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কেজিদরে বিক্রি করে থাকি।

মনিদাসের মতো এই শিল্পে জড়িত ধামরাইয়ের সুয়াপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন। কথা মনিদাস নামের এমনই একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিটা কারিগরকে মজুরি দেওয়া হয় কেজি হিসেবে। প্রতি কেজি পণ্য তৈরির জন্য মজুরি ২৫ টাকা করে দেওয়া হয়। দৈনিক প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি পণ্য বুনতে পারেন একজন কারিগর।

এ কাজে যুক্ত এলাকার বেশ কয়েকজন নারী। বাড়তি আয়ে স্বাবলম্বিতা এসেছে তাদের জীবনে। শিল্পি রানী এমনই এক কারিগর। তিনি জানান, এই কাজে প্রতি মাসে আয় হয় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। স্বামীর রোজগারের পাশাপাশি এই বাড়তি আয় দিয়েই চলছে তাদের তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচ। আগে বাড়ির কাজ করেই কাটত দিন। ছিল না বাড়তি আয়ের মাধ্যম। ফলে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। বর্তমানে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি হয়েছেন স্বাবলম্বী। স্বামীর পাশাপাশি নিজেও মেটাতে পারছেন সংসারের খরচের একটি অংশ।

আশু সরদার নামে আরেক কারিগর বলেন, প্রায় ১৪ বছর ধরে বাঁশ দিয়ে বুননের কাজ করলেও এখন প্লাস্টিকের এই ফিতা দিয়ে পণ্য বানাই। কয়েকদিন পরই শুরু হবে ধান কাটার মৌসুম। তাই ধানের গোলার এখন অনেক চাহিদা। কয়েক মাস এখানকার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করে। দৈনিক আয় হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। বছরের অন্য সময় ঘরের সিলিং, বেড়া, কবুতরের খোপসহ বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি করে থাকি।

প্লাস্টিকের বেড়া বুনে চলেছেন ষাটোর্ধ্ব নির্মল সরকার। তাকে জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, একসময় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন বয়সের কারণে তা আর পারেন না। ছেলেরাও বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। এই কাজ করেই স্ত্রীসহ দুজনের আহার জোগাড় করেন তিনি।

মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলা থেকে ধানের গোলা কিনতে এসেছেন আসাদুজ্জামান নামের এক কৃষক। তিনি বলেন, মাঝারি আকারের একটি গোলা কিনেছি। ওজন হয়েছে ৩০ কেজি। ১২০ টাকা দরে দাম এসেছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এই গোলা অনেক টেকসই হয়। আগে বাঁশের তৈরি গোলায় ধান রাখতাম। সেগুলো বেশি দিন ব্যবহার করা যায় না, ইঁদুরে কেটে ফেলে। অনেক ধান নষ্টও হতো। কিন্তু প্লাস্টিকের গোলায় ধান রাখলে নষ্ট হয় না, ইঁদুরেও কাটে না। দেখতেও সুন্দর। 

বিশ্বনাথের কারখানার পাশেই প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বেড়ার ঘরে বসবাস মাধবী দাসের। তিনি বলেন, টিন কিংবা ইটের ঘর তৈরিতে অনেক খরচ। সামর্থ্যের অভাবে প্লাস্টিকের বেড়া দিয়ে ঘর বানিয়েছি। এই ঘরে থাকতে কোনো অসুবিধা হয় না।

ফেরার পথে আবারও কথা বলি, বিশ্বনাথ চন্দ্র মনিদাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার দেখাদেখি এই এলাকায় আরও দুজন এ ব্যবসা শুরু করেছেন। আমাদের এখানে অনেক নারী শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। নারী-পুরুষ উভয়ই এসব পণ্য তৈরির কাজ করে সচ্ছলতার দেখা পেয়েছে। পবিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করা হচ্ছে।

সরকার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে এ শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে বলেও মনে করেন এ উদ্যোক্তা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা