সাঁওতাল হত্যা দিবস
গাইবান্ধা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩৭ পিএম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৫৪ পিএম
সাত বছরেও গাইবান্ধার তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার হয়নি উল্লেখ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন আদিবাসী, বাঙালি ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ঘটনার পর থেকে নির্যাতনের শিকার আদিবাসী সাঁওতালরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। গৃহহীন হয়ে তারা অসহায়ভাবে দিন পার করছে। আহতরা চিকিৎসার অভাবে কেউ পঙ্গু, কেউ শরীরে গুলির স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। নভেম্বরের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাসের বাণী শোনালেও তার কোনোটিই এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকায় ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাঁওতাল হত্যার বিচার, আসামিদের গ্রেপ্তার এবং বাড়িঘরে লুটপাট, গুলিতে আহত ও অগ্নিসংযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণ ও সাঁওতালদের তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যেকোনো এলাকার উন্নয়নে ইপিজেড স্থাপন সেই এলাকার মানুষের জন্য অবশ্যই সুখের খবর। কিন্তু সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আদিবাসী ও বাঙালিদের বাপ-দাদার জমিতে সেখানকার ওয়ারিশগণের সম্মতি ছাড়াই ইপিজেড স্থাপনের ঘোষণা আদিবাসী-বাঙালি জনগণকে হতাশ করেছে।
সোমবার সকাল থেকে নানা আয়োজনে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ পালিত হয়। সকাল ৮টায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার জয়পুর গ্রামে নির্মিত অস্থায়ী শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। সকাল ৯টায় সাঁওতালপল্লী মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে সাঁওতালদের ঐতিহ্য তির-ধনুক, কালো পতাকা, ব্যানার, বিভিন্ন দাবিদাওয়া সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ১০ কিলোমিটার পথ প্রদক্ষিণ করে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের কাটামোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বেলা সাড়ে ১১টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শুরুতে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করা হয়।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ ও জন উদ্যোগ গাইবান্ধা যৌথভাবে এসব কর্মসূচি পালন করে।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বাবু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু, বাসদ নেতা জয়নাল আবেদীন মুকুল, আদিবাসী নেতা বিমল খালকো, অগস্টিন মিনজী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব দীপন হাসান, মানবাধিকার কর্মী মনির হোসেন সুইট, আদিবাসী নেতা প্রিসিলা মুর্মু, সুফল হেমব্রম, গৌড় চন্দ্র পাহাড়ী, মাথিয়াস মার্ডি, বৃটিশ সরেন, তৃষ্ণা মুর্মু প্রমুখ।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সুগার মিল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাঁওতালদের উচ্ছেদ করতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী, পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩০ জন সাঁওতাল আহত হয়। তাদের মধ্যে মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম মারা যান। এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুর্মু বাদী হয়ে ওই বছরের ১৬ নভেম্বর মামলা করেন। তবে ওই মামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি।