গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ২২:২৭ পিএম
গত এক সপ্তাহ ধরে চলা পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় পৃথক ৫টি মামলা করা হয়েছে। এতে ২ হাজার ৮০০ জনের বেশি শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ মামলায় সাভারে ১ হাজার ৫০০ এবং ২ মামলায় গাজীপুরে ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থানা পুলিশ বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে। ওই ৯ জনকে গত শনিবার বিক্ষোভ চলাকালে আটক করেছিল পুলিশ। গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ৭০০ থেকে ৮০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি কারখানা কর্তৃপক্ষ।
প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর সাভার ও আশুলিয়া প্রতিবেদক জানিয়েছেন, আশুলিয়ায় শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কারখানা কর্তৃপক্ষ ৩টি মামলা করেছে। যেখানে দেড় হাজার অজ্ঞাতনামা শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে। রবিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী।
আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেরন সরকার মার্কেট এলাকার হামীম গ্রুপের নেক্সট কালেকশন্স লিমিটেড এবং ধনাইদ ইউসুফ মার্কেট এলাকার ডিসাং সোয়েটার লিমিটেডের পক্ষ থেকে এসব মামলা করা হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে কাঠগড়ার ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডে ভাঙচুর চালায় শ্রমিক ও বহিরাগতরা। এ ঘটনায় ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কারখানার ডিজিএম অপারেশন মো. আনিসুর রহমান। ধনাইদ এলাকায় ডিসাং সোয়েটার কারখানায় ভাঙচুর হয় একই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক ও বহিরাগত আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া হামীম গ্রুপের নেক্সট কালেকশন্স লিমিটেডে গত ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হামলা হয়।
সেদিন হামলায় গুরুতর আহত হন কারখানার শ্রমিকসহ কর্মকর্তারাও। কারখানায় ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার। এ ঘটনায় অনধিকার প্রবেশ, হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট, জখম, চুরি ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জনের বিরুদ্ধে। এতে তিন মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০০ জন।
নেক্সট কালেকশন্স লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফরহাদ উদ্দীন বলেন, শনিবার আশুলিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে।
রবিবার আমাদের কারখানার শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন। কারখানা চলছে। প্রায় সাত দিন ধরে চলে আসা মজুরি বৃদ্ধির দাবির আন্দোলনের পর রবিবার আশুলিয়া ছিল একেবারেই শান্ত।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকালে যথাসময়েই শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করেছেন এবং কাজ করছেন। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, রবিবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা কাজে ফিরে গেছেন। সবাই স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এছাড়া কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। কারা ভাঙচুর করেছে বা কারা জড়িত ছিল, সেসব বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর গাজীপুর প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আবারও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। রবিবার শ্রমিকরা কোনাবাড়ীর কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।
রবিবার সকালে কাশিমপুরে মোল্লা মার্কেট এলাকায় মিতালি ফ্যাশন লি. ও হাতিমারা এলাকায় কটন ক্লাব নিটওয়্যার লি., জিতার মোড় কাইজার নামক তিনটি ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকার দাবিতে কাজ বন্ধ করে যার যার জায়গায় বসে থাকেন। পরে শ্রমিকরা ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে রিয়াজ ফ্যাশনে ভাঙচুর চালান এবং বিক্ষোভ মিছিল করেন। পুলিশ এসে পানি স্প্রে করে ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে কাশিমপুর এলাকায় সব কারখানা রবিবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
পরে রবিবার দুপুর ২টার সময় আবারও পোশাকশ্রমিকরা কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়কে বিক্ষোভ শুরু করলে জরুন এলাকায় রিপন গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, আলিফ গ্রুপ, কেয়া গ্রুপ এবং এস্ট্রো গার্মেন্টসে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কোনাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে শ্রমিক বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণ ছিল।
অপরদিকে গত শনিবার এসএম নিট ওয়্যার লি. কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনের নামে মামলা হয়েছে। এজাহারে উল্লেখিত ৯ শ্রমিককে শনিবারই আটক করেছিল পুলিশ।
ওইদিন গাজীপুর সদর উপজেলার নতুনবাজার এলাকার এসএম নিট গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ শ্রমিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ওই কারখানার ৯ জন শ্রমিককে আটক করে। এরপর থেকে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে।
এ ঘটনায় এএসআই অহিদুল ইসলাম পুলিশের সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি ও মারপিট করে গুরুতর জখম করে সরকারি পোশাক ধরে টানাহেঁচড়া ও লাঞ্ছিত করার অপরাধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০-৫০০ জনের নামে মামলা হয়েছে।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহতাব উদ্দিন বলেন, একটি মামলা রুজু হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ৯ জনকে রবিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কাভার্ড ভ্যানে দুর্বৃত্তদের আগুন
গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় রবিবার সকালে গ্যাস সিলিন্ডারবাহী কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেন দুর্বৃত্তরা। এতে আগুনে গাড়ির সামনের অংশ পুড়ে যায়। এছাড়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় একটি পিকআপ ও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহীম হোসেন বলেন, একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আধাঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। কারা আগুন দিয়েছে তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম-বিষয়ক সহসম্পাদক হুমায়ুন কবির খানের নেতৃত্বে রবিবার সকালে কালিয়াকৈর উপজেলায় অবরোধ বাস্তবায়নে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, নির্বাহী সদস্য মেয়র মজিবুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি আ ন ম ভিপি ইব্রাহিম, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ, পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল ইসলাম সিকদার, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিজভী আহমেদ দুলাল প্রমুখ। এছাড়া সকালে শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি আসপাড়া এলাকায় বিএনপির সমর্থকরা একটি পিকআপসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।