× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়ল স্বপ্নের ট্রেন

সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২৩ পিএম

আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৬ পিএম

কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়ল স্বপ্নের ট্রেন। প্রবা ফটো

কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়ল স্বপ্নের ট্রেন। প্রবা ফটো

সকাল ৯টা। প্রকৃতিজুড়ে শীতের আমেজ। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বেজে ওঠে ট্রেনের হুইসেল। প্রতিদিন এই হুইসেল বাজলেও আজকের হুইসেলটি অন্যরকম আনন্দের। কারণ এই হুইসেলের শেষ গন্তব্য পর্যটন নগরী কক্সবাজার। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে স্বপ্নের এই ট্রেন। ২৯০০ সিরিজের ইঞ্জিন নিয়ে জিআইবিআর স্পেশাল ট্রেনটি রয়েছে আটটি বগি।

রবিবার (৫ নভেম্বর) সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৪৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথের যাত্রা শুরু হয়। 

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ষোলশহর স্টেশন, জ্বালানিহাট রেলস্টেশন, সংস্কার করা শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু পার হবে ট্রেনটি। এরপর বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ এলাকা পার হয়ে যাবে দোহাজারী স্টেশনে। সেখান (দোহাজারী) থেকেই মূলত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। দোহাজারী স্টেশন থেকে স্বপ্নের এই ট্রেন যাবে সাতকানিয়া, লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্য হয়ে চকরিয়া; চকরিয়া থেকে রামু হয়ে যাবে কক্সবাজারে নবনির্মিত আইকনিক স্টেশনে। 

জিআইবিআর এর এই পরিদর্শন দলের সঙ্গে আরও আছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. নাজমুল ইসলাম, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম চৌধুরীসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শন শুরুর আগে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে জিআইবিআর প্রধান রুহুল কাদের আজাদ বলেন, ‘আমরা নবনির্মিত দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শনের জন্য যাচ্ছি। আমরা নবনির্মিত রেললাইনের ট্র্যাক, স্টেশন বিল্ডিং, সিগন্যালিং, ব্রিজ, কালভার্ট, আন্ডারপাস সরেজমিনে আমরা পরিদর্শন করব। আমাদের সঙ্গে সিগন্যালিং, ইলেকট্রিক্যাল, রেল ট্র্যাকসহ সমস্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা আছেন। আমার কাজ হলো রেল ট্র্যাক থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা। দেখে আমি ঢাকায় গিয়ে রিপোর্ট দিব।’

এ সময় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের এই যাত্রা ট্রায়াল নয়। জিআইবিআর প্রধানের পরিদর্শন। এখানে আমাদের জিআইবিআর প্রধানসহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রত্যেক বিভাগের প্রধানরা আছেন। জিআইবিআর প্রধানের সঙ্গে আমরাও যাচ্ছি। কালুরঘাট সেতুসহ দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ পরিদর্শন করা হবে। এর রিপোর্ট দেবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্মিত এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন।’

এর আগে শনিবার (৪ নভেম্বর) ৯২ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য একাধিকবার ট্রায়াল রান করে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ। এদিন ২২০০ সিরিজ (ওজন ৫০-৫৫ টন), ২৯০০ সিরিজ (ওজন ৭০-৭৫ টন) ও ৩০০০ সিরিজের (ওজন ৮৫-৯০টন) ইঞ্জিন দিয়ে এই ট্রায়াল রান করা হয়। 

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে এখন ট্রেন চলাচলে আর কোনো বাধা নেই। এখন স্বপ্নের ট্রেন যাবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে নতুন জেলা হিসেবে যুক্ত হবে কক্সবাজার।’ 

তিনি বলেন, ‘বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম গত তিন মাস ধরে প্রায় শতবর্ষী এই কালুরঘাট সেতুতে সংস্কারকাজ করেছে। বৃহস্পতিবার সামান্য কিছু কাজ বাকি ছিল। পূর্বে কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের এক্সেল লোডে ট্রেন চলাচল করতো। এখন বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে সংস্কারের পর কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে ১৫ টন এক্সেল লোডে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। আমরা ইতোমধ্যে তিন হাজার সিরিজের (৯০ টন ওজন) ইঞ্জিন দিয়ে ট্রায়ালও করেছি। এখন এই ইঞ্চিনের সঙ্গে ৫০টি কোচ লাগালেও আর কোনো সমস্যা হবে না।’

এদিকে আগামী ১১ নভেম্বর নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এ প্রসঙ্গে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথটি আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আপাতত ট্রায়াল রান হবে না। জিআইবিআর প্রধানের নেতৃত্বে নতুন রেলপথটি পরিদর্শনে যাচ্ছেন আজ। তারা কোনো ত্রুটি আছে কি না তা যাছাই বাছাই করবেন।’ 

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। প্রকল্পের অধীনে ১০২ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক বসানো হয়েছে। দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ এবং আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশনে নির্মাণকাজও শেষ। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ নয়টি স্টেশনের নির্মাণকাজ একদম শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়াও আন্ডারপাসের ওপর দিয়ে হাতি চলাচলের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রকল্পের নথির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেগা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরে অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় বেশকিছু দিন প্রকল্পটি থমকে থাকার পর ২০১৫ সালে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দোহাজারি-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় তমা কনসট্র্যাকসন্স কোম্পানি ২৬৮৮ কোটি টাকা এবং চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিইসসিসি ও দেশীয় ম্যাক্স কনসট্র্যাকসন্স ৩৫০২ কোটি টাকায় যথাক্রমে : এক ও দুই নম্বর লটের কাজ পায়। পরবর্তী সময়ে ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা