রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২০ এএম
সমিতির শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদ সুজন। প্রবা ফটো
ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা সমবায় সমিতির প্রায় ১২ হাজার সদস্যের জমানো শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম শামীম আহমেদ সুজন। তিনি পুঠিয়া উপজেলার মোল্লাপাড়া হাট কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক শাখার সিনিয়র অফিসার ও শাখা ব্যবস্থাপক।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুজন তার বড় ভাই সুমন এবং বাবা সাদিকুল ইসলাম মিলে নিজেদের বাড়িতে ‘ভাই ভাই সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন।
এক যুগেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এই সমিতি ঋণের পাশাপাশি সদস্যদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও মুনাফা দিয়ে থাকত। এক লাখ টাকা আমানতের বিপরীতে প্রতি মাসে লভ্যাংশ দেওয়া হতো ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
বর্তমানে ভাই ভাই সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সদস্য প্রায় ১২ হাজার। সদস্যদের জমানো টাকার পরিমাণও শতকোটির কাছাকাছি। সম্প্রতি অতি মুনাফার আশায় সমিতির গ্রাহকদের গচ্ছিত টাকা অনলাইন অ্যাপভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি এমটিএফইপিতে বিনিয়োগ করেন সুজন। অ্যাপ কেলেঙ্কারির পর বাড়ি বিক্রি করে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে সমবায় সমিতির সদস্যদের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
সমবায় সমিতির সদস্য আয়েশা নাসরিন জানান, তিনি নিজে, শাশুড়িসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন সমিতিতে। কারণ ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন সুজন। আতিকুল ইসলাম নামের আরেক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি সাড়ে তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন সমিতিতে। গত মাসে সুজনের বাবার বাড়িতে সমিতির অফিস তালাবদ্ধ দেখে সবার সন্দেহ হয়। এরপর থেকে খোঁজ করা হলেও তার বিষয়ে কেউ তথ্য দিতে পারছে না। সুজনের উধাও হয়ে যাওয়ার খবরে দুশ্চিন্তায় আছেন আয়েশা-আতিকুলের মতো হাজারো গ্রাহক।
অভিযুক্ত সুজন প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, অফিস সুজনের বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছে। ঘটনাটি অফিসের বাইরের হওয়ায় এবং অভিযোগ না আসায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নাই।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চলমান থাকলেও এই সমিতির আদৌ কোনো নিবন্ধন আছে কি না, তা জানা যায়নি। রাজশাহী জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ভাই ভাই সমবায় ও ঋণদান সমিতির অনুমোদন আছে কি না, তা দেখতে হবে।
এদিকে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে জড়ো হন সমিতির শতাধিক সদস্য। তারা কাউন্সিলর কামরুজ্জামানকে এ বিষয়ে অভিযোগ জানান। কাউন্সিলর অভিযুক্ত সুজনের বাবা, ভাইসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান ও তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বলেন, ‘ভাই ভাই সমবায় সমিতি পুরোনো প্রতিষ্ঠান। সদস্যদের ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা আছে সমিতিটিতে। সদস্যদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুজনের ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের ডেকে এনেছিলাম। তারা সদস্যদের সব অর্থ ফেরত দেবে জানিয়ে স্ট্যাম্পে সই করেছেন। যত দিন এই সমস্যার সমাধান না হবে, তত দিন আমার দুইজন প্রতিনিধি তাদের অফিসে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অবস্থান করবে।’
অভিযুক্ত সুজন কোথায় আছেন এবং সমিতিতে কত টাকা আমানত জমা আছে, এ বিষয়ে জানতে তার ভাই সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে চাননি। সুজনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বর ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।