× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খুলনা-মোংলা রেলপথে পাল্টে যাবে অর্থনীতি

সুনীল দাস চৌধুরী, খুলনা

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৪০ এএম

আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৪ পিএম

খুলনা-মোংলা রেলপথে পাল্টে যাবে অর্থনীতি। প্রবা ফটো

খুলনা-মোংলা রেলপথে পাল্টে যাবে অর্থনীতি। প্রবা ফটো

খুলনা-মোংলা রেলপথ আজ বুধবার উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি এটি উদ্বোধন করবেন। এরই মধ্যে খুলনার ফুলতলা থেকে বাগেরহাটের মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়েছে। এ পথ চালু হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি।

এখন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত খুলনা-মোংলা রেললাইন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় বলে জানিয়েছেন খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসাইন মাসুম। 

রেলওয়ের পশ্চিম জোনের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, জনবল নিয়োগ করা, ট্রেনের সংখ্যা, ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়া নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন করে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে দেড় মাস সময় লাগতে পারে।

খুলনা-মোংলা রেলপথের উদ্বোধনের ফলে এই রেলপথের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে মোংলা বন্দরের পণ্যসামগ্রী একদিকে যেমন দেশের মধ্যে কম খরচে পরিবহন করা যাবে। তেমনি এই রেলপথ ব্যবহার করে প্রতিবেশী তিন দেশের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের বৈপ্লবিক পরির্তন এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির অগ্রগতিতে রেলপথটি গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবে। 

প্রকৌশলী আহমদ হোসেন মাসুম জানান, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সবশেষ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এরই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। 

তিনি আরও জানান, প্রকল্পের প্রধান কাজ ছিল ৭৭৬ দশমিক ৬৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, ২১ দশমিক ১১ কিলোমিটার লুপ লাইন, আটটি রেলওয়ে স্টেশন তৈরি, ৩১টি ছোট-বড় সেতু নির্মাণ, ১১২টি কালভার্ট, রূপসা নদীর ওপর ৭১৬ দশমিক ৮০ মিটার সেতু নির্মাণ, রূপসা সেতুর দুই প্রান্তে ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) নির্মাণ, ২০০ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নির্মাণ। এসব কাজের মধ্যে প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ। ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলসেতুর কাজ পুরোপুরি এবং ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার পথ হলেও স্টেশনগুলোর ডাবল লাইন হিসেব করে এই প্রকল্পে রেলপথ ৯১ কিলোমিটার বসানো সম্পন্ন হয়েছে। ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত মোট ৯টি প্লাটফর্ম রাখা হয়েছে। সবগুলোর নির্মাণও সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ১০৭টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ শেষে প্রকল্পের ফুলতলা থেকে মোংলায় পরীক্ষামূলকভাবে ইঞ্জিনও চালানো হয়েছে। 

খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান জানান, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। রেলপথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় খুলনা-মোংলা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো। আর ট্র্যাক লিংকিং করেছে আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।

খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছে এ অঞ্চলের ২১টি জেলা। এখন খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হলে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব বাড়বে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান এবং পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক। 

খুলনা বিভাগীয় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক প্রণব কুমার রায় বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে গত কয়েক বছর দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। খুলনা-মোংলা রেলপথ উদ্বোধনের পর এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি আরও বাড়বে। গত পাঁচ বছরে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১১১টি ছোট-বড় ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিনিয়োগ হয়েছে ৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪ হাজার ৯২৫জনের। যা আরও বৃদ্ধি পাবে। 

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, মোংলা বন্দর দিয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি, হিমায়িত মাছ ও পাট বেশি রপ্তানি হচ্ছে। গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। সড়কপথে কার্গো পরিবহনের খরচ অনেক বেশি। তবে খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হলে সেই তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ খরচ কম হবে বলে জানান তিনি।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, ২০২২সালে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে এ অঞ্চলের বাণিজ্যিক গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার রেলসংযোগ হচ্ছে, ফলে পরিবহন জটিলতা আর থাকছে না। এতে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক গতি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ধীরে ধীরে যশোরের বেনাপোল থেকে খুলনা হয়ে মোংলা পর্যন্ত একাধারে শিল্পনগরীতে পরিণত হবে। এ ছাড়া খানজাহান আলী বিমানবন্দর এবং গ্যাস সরবরাহ চালু হলে দক্ষিণাঞ্চল দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী নেতারা ।

এদিকে, খুলনা-মোংলা রেলপথ চালুর মধ্যে দিয়ে মোংলা বন্দরের সাথে নৌ, সড়ক ও রেলপথের মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ও পণ্য পরিবহন অনেকটা সহজ হবে বলে জানান মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী। 

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের উদ্বোধনও আজ

এদিন আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। এর মাধ্যমে একই দিন দুই গুরুত্বপূর্ণ রেলপথের উদ্বোধন করা হবে।

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কয়েক মাস আগেই রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। এরপর থেকেই অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের। কিন্তু নানা কারণে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করা যাচ্ছিল না। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রেললাইন বসানোর কাজ পুরোপুরি শেষ হয় কয়েক মাস আগেই। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখতে চলতি মাসে সংশ্লিষ্ট একাধিক দল আখাউড়ায় আসেন। মাসের শুরুতে ঢাকায় রেল ভবনে হওয়া এক বৈঠকে ১ নভেম্বর প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সময় নির্ধারণ করা হয়।

২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা