× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সরকারি রাস্তা জবরদখলের অভিযোগ

রিপন আকন্দ, গাইবান্ধা

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১০:১৮ এএম

আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১০:২৫ এএম

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের জায়গায় রাস্তা নির্মাণের জন্য খনন করা হয়। প্রবা ফটো

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের জায়গায় রাস্তা নির্মাণের জন্য খনন করা হয়। প্রবা ফটো

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে রেকর্ডভুক্ত রাস্তার সরকারি জায়গা দখল করে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার কঞ্চিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনোয়ার আলম সরকারের বিরুদ্ধে। অপরদিকে রাস্তার জন্য বরাদ্দ সরকারি জায়গা বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের ভেতরের জায়গা দখল করে চেয়ারম্যানের উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণের জন্য খনন ও পুরোনো গাছ কাটা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠের জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বিকালে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে ঈদগাহ মাঠ কমিটি। মানববন্ধনে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের পূর্ব দিকে ১২নং কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ। মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের পূর্ব দিকে এবং ইউনিয়ন পরিষদের প্রাচীর ঘেঁষে পাকা রাস্তা করার জন্য আনুমানিক ১০০ মিটার জায়গা খনন করে রাখা হয়েছে। যার উভয় দিকেই রয়েছে পাকা সড়ক। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে পড়ে আছে বড় একটি গাবগাছের ডালপালাসহ খণ্ডিত বিভিন্ন অংশ।

এদিন রাস্তার জন্য ঈদগাহ মাঠের জায়গা খনন করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করে ঈদগাহ মাঠ কমিটি। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শত মানুষ। শুরুতেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বাধা দেয় কঞ্চিবাড়ী তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ। পরে বাধা উপেক্ষা করে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে ইদগাহ মাঠ কমিটিসহ আন্দোলনকারীরা।

শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভায় পুলিশের বাধা দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানান বক্তারা। তারা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম পরিষদের শ্রমিক দিয়ে জোরপূর্বক ঈদগাহ মাঠের জায়গায় রাস্তা নির্মাণের জন্য খনন করেছেন, যেটা বেআইনি। অন্যদিকে তিনি রাস্তার রেকর্ডভুক্ত জায়গা দখল করে ইউনিয়ন পরিষদের প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। রাস্তার মূল জায়গা দখল করে এখন অন্যায়ভাবে ঈদগাহ মাঠের জায়গায় রাস্তা করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। মানববন্ধন শেষে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিলও করেন তারা।

ঈদগাহ মাঠের সেক্রেটারি শাহ রেজাউল করিম বলেন, মাঠের ভেতর দিয়ে রাস্তা না করে রাস্তার জন্য রেকর্ডভুক্ত স্থান দিয়ে রাস্তা করতে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছিল। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম সরকার কর্তৃক ঈদগাহ মাঠের জায়গা দখলের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তাই অবিলম্বে তিনি ঈদগাহ মাঠের জায়গা বাদ দিয়ে রেকর্ডভুক্ত জায়গা দিয়ে রাস্তা করার দাবি জানান।

জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট রাস্তার জায়গা দখল করে ইউনিয়ন পরিষদের প্রাচীর নির্মাণ ও ওই জায়গার গাছ কাটা এবং ঈদগাহ মাঠের জায়গায় জোরপূর্বক সরকারি রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঈদগাহ মাঠ কমিটির পক্ষে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খাদেম হোসেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ঈদগাহ মাঠটি অনেক পুরোনো। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ পাশের রাস্তার জায়গায় প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ ঈদগাহ মাঠ দিয়ে চলাচল করে। জনসাধারণের সুবিধার্থে রাস্তাটি বন্ধ করেনি ঈদগাহ মাঠ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সম্প্রতি তিস্তা সেতু সংযোগ সড়ক (এলজিইডি কর্তৃক) নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করায় এই রাস্তাটিও পাকাকরণের জন্য তালিকাভুক্ত করে কর্তৃপক্ষ। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে ইউপি কমপ্লেক্স ভবনের সামনের মাঠ থেকে ৪ শতক ও ঈদগাহ মাঠ থেকে আধা শতক জমি হুকুম দখল করে রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য নির্ধারণ করে। যা লাল চিহ্নিত অবস্থায় রয়েছে।

কিন্তু কঞ্চিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম সরকার সম্পূর্ণ রাস্তাটি জোরপূর্বক ঈদগাহ মাঠের ওপর দিয়ে করার জন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে মাটি খননের কাজ শুরু করেন। পরে ঈদগাহ মাঠ কমিটি, মুসল্লি ও স্থানীয় জনগণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দারস্থ হয়। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান সমাধানের জন্য ঘটনাস্থলে গেলেও ইউপি চেয়ারম্যানের অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

এ ছাড়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কোনো দরপত্র বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই রাস্তায় থাকা একটি বড় গাবগাছ কেটে বিক্রি করে দেন ইউপি চেয়ারম্যান। 

পরে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্তের নির্দেশ দিলে উপজেলা ভূমি অফিসের একজন সার্ভেয়ার, একজন স্থানীয় সার্ভেয়ারসহ চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগ তদন্ত করেন।

১২ অক্টোবর উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন রাস্তার জমি দখল করে প্রাচীর করা হয়েছে। প্রকৃত রাস্তায় প্রাচীর করায় স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে ঈদগাহ মাঠ দিয়ে চলাচল করে।

লিখিত অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খাদেম হোসেন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া তদন্তে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলো। তারপরেও চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম কীভাবে পরিষদের শ্রমিক দিয়ে জোরপূবর্ক ঈদগাহ মাঠের জায়গা রাস্তার জন্য খনন করেন। এত কিছুর পরেও প্রশাসন নীরব কেন?

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কঞ্চিবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান মো. মনোয়ার আলম সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো সরকারি রাস্তা দখল করি নাই, রাস্তাও করি নাই। এলজিইডি রাস্তা করেছে।’

ইউনিয়ন পরিষদের শ্রমিক দিয়ে ঈদগাহ মাঠের জায়গা রাস্তার জন্য খননের প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি কেন করব? আমি তো ঠিকাদার নই। ঠিকাদার লেবার দিয়ে করেছে।’

পরিষদসংলগ্ন রাস্তার গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো গাছ কাটিনি। রাস্তার কাজের সময় এলজিইডি ভেকু মেশিন দিয়ে পরিষদের প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে এবং মাটি গভীরভাবে খনন করায় গাছটি উপড়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। তখন নিরাপত্তার জন্য গাছটি পরিষদ কাটে, তা রক্ষিত আছে।’

এ সময় উপজেলা প্রশাসনের কাছে ভূমি কর্মকর্তার দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন মিথ্যা দাবি করে বিষয়টি পুনরায় তদন্তের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

রাস্তা নির্মাণের জন্য ঈদগাহ মাঠে খননের বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শামসুল আরেফীন খান বলেন, ‘যেহেতু রাস্তার ওই অংশটি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। তাই ওখানে আমরা কাজ করিনি, ওই অংশে আমরা কোনো খননও করিনি।’

গাছ কাটার বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা খন্দকার মেহেদি হাসান বলেন, গাছটি কাটার আগে তাদের জানানো হয়নি। তবে সপ্তাহখানেক আগে কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে একটি কাটা গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

নিয়ম প্রসঙ্গে বন কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের কোনো গাছ কাটার প্রয়োজন হলে কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা মূল্য নির্ধারণের জন্য বন বিভাগকে জানাবে। বন বিভাগের মূল্য নির্ধারণের পর স্থানীয় প্রশাসন কমিটি গঠন করবে এবং এরপর দরপত্র বা ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এ গাছটির ক্ষেত্রে তা হয়নি। তবে দুর্যোগে-দুর্ঘটনার বিষয়টি ভিন্ন।

এসব বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, দ্রুতই এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে, তবে সেটি আইন অনুসারেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা