প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪৭ এএম
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১০:২৫ এএম
হামুনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি। প্রবা ফটো
ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু কক্সবাজার জেলায় ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর চট্টগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, তার জেলায় মোট ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ১০৫টি কাঁচাঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৩ কেভি লাইনের ১৭৪টি, ১১ কেভি লাইনের ১৮০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। ২৩টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ৪৯৬টি স্পটে তার ছিঁড়ে গেছে। ১৮৩৮টি মিটার নষ্ট হয়েছে। ৮০০টি স্পটে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পিডিবি ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে গতকাল রাতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত।
জেলায় ঝড়ের সময় গাছচাপায় মারা গেছে তিনজন। আহত হয়েছে শতাধিক। তা ছাড়া জেলার মহেশখালীতে দুর্যোগপূর্ণ রাতে সাপের কামড়ে তিনজন আহত হয়েছে; যারা হাসপতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক।
চট্টগ্রাম
হামুনে চট্টগ্রামে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৮৫ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬৭টি ঘরবাড়ি। এর মধ্যে ২৮৩টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়ায় ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে পুরো আনোয়ারা উপজেলা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার এসব তথ্য জানিয়েছেন। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, হামুনে চট্টগ্রামের ছয়টি উপকূলীয় উপজেলার প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ৮১৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিহত দুই নারীর বাড়ি বাঁশখালী ও সাতকানিয়া উপজেলায়। ৭০ ও ৬৫ বছরের দুই নারী গাছচাপা পড়ে মারা যান।
ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, তা ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে ১১টি গরু-মহিষ ও সাতটি ছাগল মারা গেছে। এতে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ভেঙে বন বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় কোটি টাকার এবং বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকার।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক বুধবার সরেজমিনে উপজেলার হাইলধর, বরুমচড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন, বরুমছড়ার নোয়ামিদ্দের বাড়ি এলাকায় গাছ পড়ে নিউ গাউছিয়া বেকারি নামে একটি কারখানা ভেঙে গেছে। মিস্ত্রিপাড়ায় গাছ পড়ে ভেঙে গেছে একটি ঘর। রায়পুর, শিলাইগড়া এলাকায় গাছ পড়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে এবং পীরখাইনসহ বেশ কয়েকটি জায়গার বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে। ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক লাইন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর আনোয়ারা জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. জসিম উদ্দিন জানান, পল্লী বিদ্যুতের সাতটি খুঁটি ভেঙে গেছে এবং একটি টাওয়ার ভেঙে গেছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় বৈদ্যুতিক লাইন ছিঁড়ে গেছে। এর মধ্যে দুটি খুঁটি ঠিক করা হয়েছে। উপজেলায় বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হতে দুই-তিন দিন লাগবে বলে জানান তিনি।
আনোয়ারা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা রাতুল হাসান জানান, উপজেলার চার-পাঁচ জায়গায় গিয়ে তারা সড়কে পড়ে থাকা গাছ কেটে যাতায়াত স্বাভাবিক করেছেন। কয়েক জায়গায় গাছ পড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যেসব জায়গায় গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে সেসব গাছ কেটে যাতায়াত স্বাভাবিক করেছেন তারা। তারা শিলাইগড়া, বরুমচড়া, রায়পুর, বৈরাগসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, হামুনে আনোয়ারার বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে গেছে। বিদ্যুতের লাইনের ক্ষতি হয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে।
বান্দরবান
প্রতিদিনের বাংলাদেশের বান্দরবান প্রতিবেদক জানিয়েছেন, অল্প বৃষ্টি কিংবা ঝড় হলেই বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সবই আপন মনে ঘুমিয়ে পড়ে। ফলে বান্দরবান যেন এক ভুতুড়ে জগতে পরিণত হয়ে যায়। সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে বুধবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত জেলায় বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
বান্দরবান বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেন মাসুম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে পড়লে কেরানীহাট, বাইতুল ইজ্জত, হলুদিয়া, সুয়ালকসহ বিভিন্ন স্থানে তার ছিঁড়ে যায়। ঝুঁকি এড়াতে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাত ১১টার পর থেকে সারারাত ধরে গাছের ডালগুলো সরিয়ে বুধবার বেলা আড়াইটায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রাম ব্যুরো, কক্সবাজার অফিস, বান্দরবান প্রতিবেদক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক]