অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১০ পিএম
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:২৩ পিএম
সবুজ পাহাড় ঢেকে যাচ্ছে সোনালী ধানে। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী চাষ পদ্ধতি জুমচাষ, যা প্রাচীনকাল থেকে প্রান্তিক পাহাড়িরা ঐতিহ্যগতভাবে করে আসছেন। এই চাষের মাধ্যমে পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ জীবনধারণ করেন। প্রতিবারের মতো এবারও তারা জুম পদ্ধতিতে ধান, ভুট্টা, হলুদসহ বিচিত্র ফসল চাষ করেছেন। বর্তমানে ধান তোলার মৌসুম চলছে। পাহাড়ে পাহাড়ে এখন পাকা ধানের মহাসমারোহ। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে চারদিক। বৃষ্টিসহ আবহাওয়া ঠিক থাকলে শিগগির শুরু হবে ধানা কাটা উৎসব।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে হয় জুমচাষ। সম্প্রতি উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগগা ইউনিয়ন সংলগ্ন সীতাপাহাড় ও রামপাহাড়ে দেখা গেছে সবুজ পাহাড়গুলো পাকা ধানের সোনালি রঙে ছেয়ে গেছে। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। স্থানীয় চাষি সুমেচিং মারমা জানান, তিনি দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড়ে জুমচাষ করে আসছেন। এর ওপরই নির্ভরশীল তার পরিবার। তিনি জানান, সারা বছর কষ্ট করে জুমচাষ করার পর এখন ঘরে ফলন তোলার সময়। গত বছরের তুলনায় এবার একটু বৃষ্টি ভালো হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে একটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে মাটি উর্বর ছিল। তখন সার না দিলেও এখন দিতে হয়। কেননা দিন দিন পাহাড়ের মাটির উর্বরতা কমে আসছে।
স্থানীয় আরেক চাষি মাবুচিং মারমা বলেন, একসময় পাহাড়ে অনেক বছর পরপর চাষ হতো। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পাহাড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন একই পাহাড়ে প্রতি বছর চাষ করা হচ্ছে। ফলে জুমচাষে সারের প্রয়োগ বাড়ছে। এতে ফসলের পুষ্টিক্ষমতা কমে আসছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কাপ্তাই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে জুমচাষ হয়ে থাকে। যেখানে ধানের পাশাপাশি আদা, হলুদ, মারফা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান আহমেদ বলেন, কাপ্তাই কৃষি বিভাগ থেকে জুমচাষিদের ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশ্র ফল, ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে। তবে জুমচাষিরা স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করলেও কৃষি বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উচ্চ ফলনশীল ধানের (ব্রি ধান-৮৭) জাতের চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।