× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বনের মোরগ ঘরে পালন করে সাফল্য

সুফল চাকমা, বান্দরবান

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১২:২৬ পিএম

নিজ খামারের বন মোরগের সঙ্গে হ্লা শোয়ে অং মারমা

নিজ খামারের বন মোরগের সঙ্গে হ্লা শোয়ে অং মারমা

বনমোরগ-মুরগি পোষ মানিয়ে গৃহে পালন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বান্দরবান সদর উপজেলার ১নং রাজবিলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেওয়াপাড়া এলাকায় হ্লা শোয়ে অং মারমা। এ কাজে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী শোয়ে মে চিং মারমা।

ঘরের চারপাশে বেড়া দিয় বিভিন্ন গাছ রোপণের মাধ্যমে বনের পরিবেশ তৈরি করে অভিনব পদ্ধতিতে গৃহপালিত বনমোরগের খামার গড়ে তুলেছেন এ দম্পতি। তাদের এই সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। তাদের আবাস বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে। এক ঘণ্টা মোটরসাইকেল ও ৪০ মিনিট পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথ হেঁটে সরেজমিনে দেখা মিলল এই খামারের।

হ্লা শোয়ে অং মারমা ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা লেখাপড়া জানেন না, বলতে পারেন না বাংলা কথাও। ফলে কথা হয় মারমা ভাষায়। তারা জানান, ‘আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে গহিন পাহাড়ে জুম কাটতে যাওয়ার সময় ছয়-সাতটি ডিমসহ একটি বনমুরগির বাসা দেখতে পাই। সেখান থেকে তিনটি ডিম নিয়ে এসে ঘরে দেশি মুরগির ডিমের সঙ্গে রেখে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করি। একটি ডিম নষ্ট হলেও বাকি দুটো ডিমের একটি মোরগ অন্যটি থেকে মুরগির বাচ্চা ফোটে। তারা দেশি মুরগির সঙ্গেই বড় হতে থাকে। একদিন দেখলাম বাচ্চা দুটো মৃতপ্রায় অবস্থায়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। বাচ্চা দুটোকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালালাম। কোনোভাবেই সুস্থ হচ্ছে না দেখে ধানের শক্ত দানা খাওয়াতে লাগলাম। জঙ্গলে গিয়ে পিঁপড়ের ডিমসহ হরেক রকম পোকামাকড় এনে খাওয়াই। ধীরে ধীরে তারা সুস্থ হয়ে ওঠে। তখন বুঝতে পারলাম, দেশি মুরগির মতো নরম ভাতের সঙ্গে ভুসি খাওয়ার ফলে পাতলা পায়খানার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখন থেকে তাদের একটু আলাদা যত্ন এবং খাবার দেওয়া শুরু করি। এভাবেই ধীরে ধীরে দুটি থেকে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে বনমোরগের খামারে পরিণত হয়েছে।’

হ্লা শোয়ে অং মারমার খামারে পাঁচ বছরে প্রায় দেড়শর মতো বনমুরগি হয়েছে। বর্তমানে আছে পরিপক্ব ২২টি মুরগি ও ১৩টি মোরগ। এ ছাড়াও আছে ২টি শিকারি মোরগ, ১৭টি বাচ্চাসহ তিনটি মা, ৯টি ডিম নিয়ে তা দেওয়া মা মুরগি আছে একটি। 


বনমোরগের বাজারদর নিয়ে হ্লা শোয়ে অং মারমা জানান, পরিপক্ব প্রতিটি মোরগ ৩ হাজার, মুরগি এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন তিনি। এ বছর আটটি মুরগি ও পাঁচটি মোরগ বিক্রি করেছেন। বেশকিছু অর্ডারও আছে। বনমোরগের ওজন দেশি মুরগির চেয়ে কম। আকারের দিক থেকেও ছোট। পরিপক্ব মোরগের ওজন সর্বোচ্চ ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হয়। মুরগির ওজন হয় ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। 

তিনি আরও বলেন, এই মুরগি বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। কারণ ভালো দাম পাওয়া যায়। ছোট বাচ্চা, মাঝারি ও বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫টি মোরগ-মুরগির জন্য প্রতিদিন ছয় কেজির মতো ধানের প্রয়োজন হয়।

বনমোরগ যখন পোষ মানিয়ে ঘরে পালন করা হয় তখন সে মুরগিকে মারমা ভাষায় বলে, ‘তোয়াইং গ্যাং’ বা ‘তইক ক্যাং’। পোষ মানা বনের মোরগের গঠন, আকার-আকৃতি, ডাক সবই অভিন্ন। তাই পাহাড়ের বনমোরগকে ফাঁদে ফেলে জীবন্ত উপায়ে শিকার করার জন্য তোয়াইং গ্যাং বা তইক ক্যাংকে ব্যবহার করা হয়। 

বর্তমানে পাহাড়-জঙ্গলে বনমোরগ অনেক কমে গেলেও এদের চাহিদা অনেক। তাই দেশি মুরগির মতো কিছুটা হলেও চাহিদা মেটাতে এই বনমুরগির বাণিজ্যিক উপায়ে বড় আকারে খামার করার স্বপ্ন দেখছেন এই দম্পতি। 

বন বিভাগের বন্য প্রাণী-বিষয়ক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি বন থেকে বন্য প্রাণীকে ধরে বাসাবাড়িতে রাখলে বা পোষ মানার চেষ্টা করলে সেটা বন্য প্রাণী নিধন আইন অনুযায়ী অপরাধ। কিন্তু যদি কোনো বন্য প্রাণীর সঙ্গে গৃহপালিত মুরগি, প্রাণীর ক্রস হয়ে গৃহেই থেকে যায় এবং পরবর্তী সময়ে গৃহেই বংশবৃদ্ধি করে তখন সেটা গৃহপালিত পশু বা পাখি হিসেবে ধরা হয়। আর যে বন্য মুরগির কথা বলা হয়েছে, সেটির ক্ষেত্রে মুরগিগুলো একপ্রকার গৃহপালিতই বলা যেতে পারে। আমার মতে, সে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে।’ হ্লা শোয়ে অং মারমার ঘরে থাকা মুরগিগুলো যেহেতু ঘরেই জন্ম নিয়েছে,

তাহলে সেটা বন্য আইনে অপরাধী হবে না বলে মনে করেন তিনি। কেননা এই বনমোরগগুলো একপ্রকার দেশি জাতের মতোই হয়ে গিয়েছে। তাকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এ কর্মকর্তা। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা