রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩১ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম
রংপুর মাহিগঞ্জে ১৪৩ বছরের পুরোনো পাবলিক লাইব্রেরি। প্রবা ফটো
ভবনের প্রবেশমুখে পিলারখচিত কারুকার্য তার পুরোনো ঐতিহ্যের কথা জানান দিলেও ভেতরে নেই কিছুই। চুরি হয়ে গেছে ভবনের দরজা-জানালা, ইট। ছাদে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন পরগাছা। রাতে পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল। ভবন প্রাঙ্গণ এখন যেন গোচারণভূমি, দখল হয়ে যাচ্ছে জমিও। ১৪৩ বছরের পুরোনো স্থাপনাটি এখন যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
জানা যায়, তাজহাটের রাজা গোপাল লাল রায় ১৮৮০ সালে প্রায় দুই একর জমির ওপর মাহিগঞ্জ তালতলা এলাকায় পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ করেন। দৃষ্টিনন্দন একতলা এ ভবনটিতে তিনি প্রয়োজনীয় বইও কিনে দেন। এলাকায় মেয়েদের শিক্ষা প্রসারের কথা চিন্তা করে রাজা গোপাল লাল রায় পাবলিক লাইব্রেরির পাশেই মানময়ী বালিকা বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার দেওয়া অর্থেই চলত প্রতিষ্ঠানটি। এ অঞ্চলের মানুষ জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি যেন খেলাধুলা করতে পারে, সেজন্য তিনি লাইব্রেরি সংলগ্ন বিশাল এলাকা ফাঁকা রাখেন।
এলাকার প্রবীণদের তথ্য অনুযায়ী, ওই মাঠেই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, বিখ্যাত সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র, বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিলসহ দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা জনসভা করেছেন। একসময় ওই লাইব্রেরিতে ১০ হাজারের বেশি মূল্যবান ও দুর্লভ বই ছিল। কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যবাহী মাহিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি তার জৌলুস হারাতে থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুই একরের মাহিগঞ্জ লাইব্রেরির পেছনের দিকে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। লাইব্রেরি মাঠে বেশিরভাগ সময় বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে বড় জায়গা দখল করে রাখছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। মূল সড়কের পার্শ্বে হওয়ার পরও জনমানব শূন্য পড়ে থাকায় ভবনের ভেতরে মাদকসেবীরা দিনে-রাতে আড্ডা দিচ্ছে। লাইব্রেরির মাঠ পরিণত হয়েছে গোচারণভূমিতে।
মাহিগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামান বলেন, মাহিগঞ্জের এমন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ, সংস্কারসহ প্রচার করা গেলে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে পর্যটক আসবে। এতে করে পুরাকীর্তি সংরক্ষণের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নও হবে।
মাহিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি সংরক্ষণ কমিটির সদস্য হাসিনুর ইসলাম বাবলু বলেন, পাবলিক লাইব্রেরির জায়গা নিয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। আমরা কয়েকবার আদালত থেকে রায়ও পেয়েছি, কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে রায়ের ওপর আপিল করায় এটি সংরক্ষণ কিংবা সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছি না।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, রংপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপনা সংরক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।