× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুই ভাস্কর্যে প্রতিরোধ-গণহত্যার গল্প

রেজাউল করিম, গাজীপুর

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৩৯ পিএম

উদ্বোধনের অপেক্ষায় গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তমঞ্চে নির্মিত ভাস্কর্য ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ’ এবং সদর উপজেলার বাড়ীয় গ্রামে নির্মিত ভাস্কর্য। প্রবা ফটো

উদ্বোধনের অপেক্ষায় গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তমঞ্চে নির্মিত ভাস্কর্য ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ’ এবং সদর উপজেলার বাড়ীয় গ্রামে নির্মিত ভাস্কর্য। প্রবা ফটো

গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ দিবসের স্মৃতিসংবলিত ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ’ ও ‘বাড়ীয়া গণহত্যা’ নামে দুটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্য দুটি এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়। চলতি মাসের শেষের দিকে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ভাস্কর কুয়াশা বিন্দু গাজীপুরের বাড়ীয়ারই সন্তান। 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে গাজীপুরের মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই শহরের মুক্তমঞ্চ ও বাড়ীয়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসংবলিত দুটি ভাস্কর্য স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে তা বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ভাস্কর্য দুটি। কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। 

সশস্ত্র প্রতিরোধ ভাস্কর্য

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১৯ মার্চ ’৭১ একটি অবিস্মরণীয় দিন। এদিন জয়দেবপুরবাসী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সন্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। অসম এই যুদ্ধে জয়দেবপুরে মনু খলিফা, কিশোর নিয়ামত ও চান্দনা চৌরাস্তায় ফুটবলার হুরমত শহীদ হন। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার ৭ দিন আগে জয়দেবপুরের এই প্রতিরোধ সারা দেশে মুক্তিকামী জনতাকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করে। সারা দেশে স্লোগান ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। এই সশস্ত্র প্রতিরোধের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। তখন চলমান বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার বৈঠকেও ১৯ মার্চের প্রতিরোধ সংগ্রামের ঘটনা আলোচনায় স্থান পায়। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ১৯ মার্চ ’৭১ একটি মাইলফলক হয়ে আছে। আর এ দিনের নায়ক আকম মোজাম্মেল হক বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বেসামরিক খেতাব ‘স্বাধীনতা পদক’-এ ভূষিত হয়েছেন। মূলত সেদিনের বীরগাথা স্মরণেই নির্মিত হয়েছে এই ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ’ ভাস্কর্যটি।

বাড়ীয়া গণহত্যা

সময়টা ১৯৭১ সালের ১৪ মে। গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়ীয়া গ্রামে প্রবেশ করে পাকিস্তানের শতাধিক সেনা। তারা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালায়। অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং অন্যরা গুরুতর আহত হন। বাড়িঘর লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামের কয়েকজন বেলাইয়ের বিল পেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাদের ওপরও গুলি চালায় বর্বর পাকিস্তানি সেনারা। পালিয়ে আসা গ্রামবাসীর জিনিসপত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা লুট করে নিয়ে যায়। যুদ্ধের পর বাড়ীয়া ও কামারিয়া গ্রামে ১৫১ শহীদের তালিকা করা হয়। কিন্তু এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয়দের। 

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯ মার্চ আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে পৌঁছায়। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এ খবর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্ল্যান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানার শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেন। এক ঘণ্টার মধ্যে হাজারো শ্রমিক-জনতা লাঠিসোটা, দা, কাতরা, ছেনি, দোনলা বন্দুকসহ জয়দেবপুরে হাজির হয়। শ্রমিক-জনতা জয়দেবপুর রেলগেটে মালগাড়ির বগি, স্লিপার, বড় বড় গাছের গুঁড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট দিয়ে স্তূপ বানিয়ে প্রতিবন্ধক তৈরি করে।

জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত মোট পাঁচটি প্রতিবন্ধক দেওয়া হয়। এ সময় টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুরে এসে আটকে পড়ে। জনতা কনভয়ের সৈনিকদের পাঁচটি চাইনিজ রাইফেল ছিনিয়ে নেয়। আটকে পড়া জাহান জেব জনতাকে উদ্দেশ করে গুলির নির্দেশ দেন। আন্দোলনরত সশস্ত্র জনতা বর্তমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ করে পাল্টা গুলি করে। হানাদার বাহিনীর গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী হতাহত হয়।

পাকিস্তানি বাহিনী কার্ফু জারি করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিবন্ধক সরিয়ে জাহান জেব বাহিনী অগ্রসর হয়ে চান্দনা চৌরাস্তায় আসে। কিন্তু সেখানেও বাধার মুখে পড়ে।

অপরদিকে জয়দেবপুরের রাজবাড়ীতে ক্যান্টনমেন্ট থাকায় পাকিস্তানি বাহিনী তিতারকুল দিয়ে চিলাই নদী পার হয়ে বাড়ীয়াতে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ভাওয়াল রাজবাড়ী ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাড়ীয়া গ্রামের দূরত্ব আট কিলোমিটার। পাকিস্তানি বাহিনী আসার কথা শুনে গ্রামবাসীর অনেকেই বাড়ি থেকে পালিয়ে বিলে নেমে যায়। কচুরিপানার মধ্যে শুধু মাথাটা বের করে দিয়ে কোনোরকমে লুকিয়ে ছিল তারা। এর মধ্যে পাকিস্তানি বাাহিনী গুলি করে। গুলিতে সেখানেই অনেকে মারা যায়। বিভিন্ন বয়সের কয়েক শ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ঘরবাড়ি। 

ভাস্কর কুয়াশা বিন্দু বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসংবলিত দুটি ভাস্কর্য নির্মাণ করতে পেরে আনন্দিত। দীর্ঘ দুই বছর লেগেছে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করতে। ভাস্কর্য দুটিতে এখানে ঘটে যাওয়া বিষয়বস্তুর সারমর্ম তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘১৯ মার্চ জাতির জন্য স্মরণীয় দিন, এটি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। এটি বাঙালির বীরত্বের স্মৃতি বহন করে। পাশাপাশি বাড়ীয়ার গণহত্যা পাকিস্তান মিলিটারির বর্বরতার ইতিহাস বয়ে চলেছে। গত ১৯ অক্টোবর উদ্বোধনের কথা ছিল, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে করা হয়নি। শিগগির ভাস্কর্য দুটি উদ্বোধন করা হবে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা