× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া (কক্সবাজার)

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৪৭ পিএম

আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৩ ২২:০৩ পিএম

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলম। সংগৃহীত ছবি

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলম। সংগৃহীত ছবি

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সাকোরপাড় স্টেশনের একটি জায়গায় ৩৫ বছর ধরে নামাজ আদায় করে আসছিলেন স্টেশনের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। নামাজের সেই জায়গা দখল করে সেলুন ও কামারের দোকান বসিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা।

মাস চারেক আগে আবু তাহের নামের এক ব্যবসায়ীর ৩০ বছরের পুরোনো দোকানও দখল করেছেন তিনি। মাস্টার রফিক উদ্দিন ও মিজবাহ উদ্দিনের ২০ বছরের দোকানও কব্জায় নেন তিনি। 

এই নেতার নাম নুরুল আলম। তিনি পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি, দোকান ও ইবাদতের জায়গা দখল করে অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, নুরুল আলম শিলখালী ইউনিয়নের হাজিরঘোনা ও সাকোরপাড় স্টেশনে ৩০-৪০ জনকে নিয়ে একটি দখলদার বাহিনী গড়ে তুলেছেন। যাদের নিয়ে অন্যের জমি ও সরকারি খাসজমি দখল করেন। তার বিরুদ্ধে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, হত্যার হুমকি, মারামারি ও চুরিসহ অর্ধ ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। মারামারি ও হত্যার হুমকির মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। তার দখলদারত্বের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

নুরুল আলমের বাহিনী সম্প্রতি সাকোরপাড় স্টেশন এলাকার রুহুল আমিন নামের একজনের তিনটি দোকান ও বসতভিটা দখলের চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে রুহুলের পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন। তবে টাকা না দিয়ে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন রুহুল আমিন।

রুহুল আমিন বলেন, ‘সাকোরপাড় স্টেশনের জায়গাগুলো আমাদের দীর্ঘদিনের পুরোনো জমি। সরকার রাস্তা প্রশস্তকরণের কারণে তিনটি দোকানের অবকাঠামো ভেঙে যায়। পরে সেগুলো সংস্কার করতে গেলে বাধা দেয় নুরুল আলমের বাহিনী। তারা তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কোনো উপায় না পেয়ে আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’

সাকোরপাড় স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি হুসেইন মো. এরশাদ বলেন, ‘আমাদের স্টেশনে দীর্ঘদিনের একটি ইবাদতখানা ছিল। ৩৫ বছর ধরে স্টেশনের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা সেখানে নামাজ পড়ে আসছিলেন। কয়েক বছর আগে নুরুল আলম আওয়ামী লীগের পদ পেয়ে ইবাদতখানার জায়গাটিও দখল করে নেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, নুরুল আলম তার বাহিনী দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক নামের একজনের জমি দখল করেছেন। পরে চাঁদা আদায় করে জমিটি ছেড়ে দেন। হাজীরঘোনার জামাল হোসেন ও কামাল হোসেনের ১৬ একর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন তিনি। এছাড়াও বনবিভাগের রিজার্ভের জায়গাও তিনি দখলে নিয়েছেন। মানুষকে জিম্মি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়, জাল সনদ দিয়ে পহরচাঁদা ফাজিল মাদ্রাসায় ১২ বছর ধরে চাকরি করেছেন নুরুল আলম। সরকারের অডিটে তার প্রতারণা প্রমাণ হলে বেতন-ভাতা বাবদ নেওয়া ছয় লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও তিনি সেই টাকা ফেরত দেননি।

বিষয়টি নিয়ে পহরচাঁদা ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবু সায়ীদ আনসারী বলেন, অন্যের সনদ দিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় চাকরি করেছেন নুরুল আলম। এটি একটি জঘন্য অপরাধ। তার প্রতারণা প্রমাণের পর বেতন বাবদ নেওয়া টাকাগুলো আত্মসাৎ বলে মনে করেছে অডিট কমিটি। যা ফেরত দেওয়ার কথা। 

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করে গত দশ বছরে নুরুল আলম শূন্য থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক হয়েছেন।

আক্তার হোছাইন নামের স্থানীয় একজন বলেন, কেউ নুরুল আলমের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয়। এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। আইনি পদক্ষেপ নিতে গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশাসনকে চাপ দেয় যাতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়।

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাইফুদ্দীন খালেদ অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘নুরুল আলমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগ অবগত নয়।’

দলীয়ভাবে শেল্টার দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কাউকে দখলবাজি, চাঁদাবাজি করার লাইসেন্স দেয়নি। কেউ যদি দলের পদ ব্যবহার করে অপকর্ম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নুরুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমি কারও জায়গা দখল করিনি। যা দখল করেছি তা আমার দালিলিক সম্পত্তি। একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা