× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঘুষ নয়, ‘সম্মানী’ নেন শিক্ষা কর্মকর্তা

জয়পুরহাট প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৭ পিএম

আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও এনটিআরসি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইল অনলাইনে পাঠাতে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে তাকে সরাসরি টাকা দিতে হয়। টাকা কম হলে তিনি কটু কথাও বলেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই শিক্ষা কর্মকর্তা অকপটে স্বীকারও করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ওই টাকা থেকেই আমাকে টাকা দেওয়া হয়। তা ছাড়া ফাইল অনলাইনে পাঠাতে পরিশ্রম করতে হয়। এতে যা টাকা নেওয়া হয় এগুলো ঘুষ নয়, সম্মানী বা পারিশ্রমিক।’

একাধিক স্কুল-মাদ্রাসার প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম গত ৫ মে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এ পর্যন্ত স্কুল-মাদ্রাসা মিলে ৮-১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয়েছে। এসব নিয়োগে ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া ওই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ও এনটিআরসি শিক্ষকদের এমপিও ফাইল অগ্রায়ন করতে জনপ্রতি ২-৫ হাজার টাকা নেন। এই টাকা কেউ বিকাশে কেউবা প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে তাকে দিয়েছেন। তিনি নিয়োগের ও এমপিও ফাইল অগ্রগামীর টাকার রসিদও দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে তিনি কাউকে এ রসিদ দেননি।

আরকেএম দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম আযম বলেন, ‘সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে মারুফ হোসেন নামে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এতে তিনি খুশি হননি। আরও টাকা দাবি করেছেন। এই টাকার বৈধতা রয়েছে বলে তিনি আমাকে এ টাকার রসিদও দিতে চেয়েছেন। তবে রসিদ দেননি। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রার্থীর অনলাইনে এমপিও আবেদন ফাইল পাঠানোর জন্য ফোনে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে বিকাশে টাকা নিয়েছেন।’ 

সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী দিয়েছি।’ তবে কত টাকা সম্মানী দিয়েছেন তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিজ উপজেলার স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য। এখানে ডিজির প্রতিনিধিও থাকেন। বেশিরভাগ নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেদের মতো করে প্রশ্ন করতে পারি না। আগেই প্রার্থী ঠিকঠাক থাকে। পরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠান প্রধান একটি খাম ধরিয়ে দেন। খাম খুলে দেখা যায়, ১৫-২৫ হাজার টাকা রয়েছে। এটা ঘুষ নয়, সম্মানী বা পারিশ্রমিক। আমাকে যে টাকা দেওয়া হয় এটা সম্মানজনক নয়। ডিজির প্রতিনিধিকে আমার চেয়ে আরও বেশি টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। এনটিআরসি কর্তৃক নিয়োগকৃত শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য ফাইল পাঠাতে হয়। একজনের ফাইল পাঠাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এ বাবদ শিক্ষকদের কাছে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা নিই। এটা দোষের কিছু দেখি না।’

সম্মানীর টাকা কোথায় থেকে আপনাদের দেওয়া হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অপ্রিয় হলেও সত্য, টাকা ছাড়া কোনো নিয়োগই হয় না। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেন। সেখান থেকে তারা খরচ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডোনেশন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে রাখতে হয়। ব্যাংক হিসাব থেকে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তুলে খরচ করতে হয়। কিন্তু ডোনেশনের টাকা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা হয় না।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনজন কর্মচারী নিয়োগ হবে। কয়েক দিন আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসে আমাকে বলেন, আপনাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে ১০ হাজার টাকা দেব। আমি বললাম আমাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেবেন, সম্মানী দিতে হবে না। পরে বিদ্যালয় পরিচালনার কমিটির একজন সদস্য এসে বললেন স্যার নিয়োগে ৪২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তাহলে বোঝেন। নিয়োগের সম্মানী টাকার রসিদ দেওয়ার কথা নয়, মাস্টার রোলে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেছি। সরকার থেকে আমাকে এ ব্যাপারে টিএডিএ দেওয়া হয় না। আমি সম্মানীর টাকা আমার আয়কর রিটার্নে দেখাব।’

এ বিষয়ে জানতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিশির কুমার উপাধ্যায়ের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা