× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অবৈধ অটোরিকশা চলছে বাধাহীন

সাইফুল ইসলাম সায়েম, নারায়ণগঞ্জ (শহর)

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১৮ পিএম

আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:২৯ পিএম

অবৈধ অটোরিকশা চলছে বাধাহীন

শিল্প ও বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জের জনজীবন এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। তার ওপর অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মিশুক, ইজিবাইকের দাপটে দিশেহারা নগরবাসী। লাইসেন্সবিহীন, অদক্ষ চালকদের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি প্রায়ই ঘটে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা। যানজটমুক্ত নারায়ণগঞ্জ নগরী গড়তে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব য্নবাহন। দিন দিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) নগরীতে পরিণত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ।

নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি, পাড়া-মহল্লা সবখানেই চলছে ব্যাটারিচালিত হাজার হাজার অটোরিকশা। এই যানবাহনগুলোর একটিরও নেই সিটি করপোরেশনের অনুমোদন। এসব বাহনের কারণে নগরীতে যানজট দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এসব বাহনের চাপ এতটাই বেশি যে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দন শীল এক সাক্ষাৎকারে ও মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নাসিকের বাজেট অনুষ্ঠানে চরম বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে প্রতিদিন অনুমোদনহীন এসব ইজিবাইক-অটোরিকশা নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছেÑ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। নগরবাসীর অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য ও কতিপয় নামসর্বস্ব সাংবাদিকের নামে নগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব বাহন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ নগরীতে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে। সিটি করপোরেশন ছাড়াও এসব বাহনের বিরুদ্ধে বরাবরই কড়া মন্তব্য করে থাকেন জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারসহ জনপ্রতিনিধিরা। নগরীতে প্রবেশের অনিয়মের অভিযোগে প্রায় প্রতিদিনই বেশকিছু অটোরিকশা ও মিশুক আটকও করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু রেকার বিলের নামে এক হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা রেখে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে মূল শহরে এসব যানবাহনের চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। 

এ ছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অটোরিকশার চালক জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৬০ টাকা হিসাবে মাসিক দেড় থেকে দুই হাজার টাকা মাসোহারায় যাদের কাছে কতিপয় ট্রাফিক পুলিশ ও কথিত সাংবাদিকদের স্টিকার-কার্ড আছে তাদের কখনোই আটক করা হয় না। আটক করার জন্য সিগন্যাল দিলেও কার্ড দেখালেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবে কয়েক হাজার অটোরিকশা থেকে মাসোহারা নেওয়া হয়। চালকরাও নিরুপায় হয়ে মাসোহারা দিয়ে চালাচ্ছেন। 

নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়েই রয়েছে এসব বাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড। শহরের উত্তর চাষাঢ়া, ২ নম্বর রেলগেট, ১ নম্বর রেলগেট, জিমখানা, গলাচিপা, কালির বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মূল সড়কের ওপর এই মিশুক-ইজিবাইকের স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের নীরব ভূমিকা দেখা গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীর নিয়মিত চাঁদা দিয়ে এসব স্ট্যান্ড পরিচালনা করা হয়। এর সঙ্গে একশ্রেণির অসাধু ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জড়িত।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, চাষাঢ়া মোড়ে পৌর মার্কেটস্থ সুগন্ধা বেকারির সামনে থেকে অটোরিকশায় সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ২ নম্বর রেলগেট এলাকার বঙ্গবন্ধু সড়কে অটোরিকশায় করে কাশিপুর, ডিক্রিচর, মুক্তারপুরসহ আশপাশের এলাকায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। মিডটাউন মার্কেটের সামনে থেকে পঞ্চবটি ও শিবু মার্কেটসহ সাইনবোর্ডে যাত্রী পরিবহন চলছে। নিতাইগঞ্জ মোড় স্ট্যান্ড থেকে সৈয়দপুর তামাকপট্টি, শহীদনগর ও মুক্তারপুর এলাকার যাত্রী পরিবহন চলছে। বিশৃঙ্খলভাবে শত শত যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে কোনো যানবাহন তো দূরের কথা মানুষ চলাচলেরও সুযোগ থাকছে না। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২ নম্বর রেলগেট এলাকার কয়েক ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটের সামনে মূল সড়কের এমনভাবে অটোরিকশা-ইজিবাইক রাখা হয়, যার ফাঁক দিয়ে কোনো ক্রেতা মার্কেটে প্রবেশ করতে পারে না। এতে ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

নগরীর দেওভোগের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব যানবাহনের কোনো নিয়মশৃঙ্খলা নেই। যোগাযোগে এসব ক্ষুদ্র যান মানুষের চলাচলে সহায়ক হিসেবে কাজ করলেও অদক্ষ, বেপরোয়া চালকদের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে এসব যানের হর্নের কারণেও সাধারণ জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই অনতিবিলম্বে এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

পথচারী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় বের হয়ে অটোরিকশা-ইজিবাইকের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটেনি এমন লোক নারায়ণগঞ্জে পাওয়া যাবে না। নগরীর প্রতিটি সড়কেই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায় চালকরা। বিশেষ করে, চাষাঢ়া, ২ নম্বর রেলগেট ও জিমখানায় সড়কের ওপর মিশুক, অটোরিকশা-ইজিবাইক রেখে দেওয়া হয়। ফলে পথচারী ও সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এসব যানবাহনের কারণে শহরে যানজট লেগেই থাকে।’ 

নগরীতে অটোরিকশা-ইজিবাইকের অবাধ বিচরণের বিষয়টি স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আব্দুল করিম বাবু বলেন, ‘চাষাঢ়া পার হতেই দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে। নম্বরপ্লেটবিহীন এসব অটোরিকশা-ইজিবাইকের আধিক্যের কারণে একদিকে যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, অপরদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শহরভিত্তিক যদি অটোরিকশা বন্ধ করে দেওয়া যায়, তাহলে যানজট কিছুটা লাঘব হবে।’ 

তবে ট্রাফিক পুলিশ জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। তিনি বলেন, ‘যারা বলেন, তাদের নিয়ে আসেন। অভিযোগ শুনে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া অন্য কেউ জড়িত থাকলে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

মিশুক-অটোরিকশা ইজিবাইক বন্ধে জোরালো কোনো পদক্ষেপ আছে কি নাÑ জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘অটোরিকশা যেদিক দিয়ে চলে, সেদিকে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে রাস্তার কাজ চলমান থাকায়, রাস্তার ভাঙাচোরা অংশ ঠিক না করলে যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব নয়। তারপরও মূল সড়কে ইজিবাইক-অটোরিকশার চলাচল বন্ধে অভিযান চলছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা