বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৩২ পিএম
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৩২ পিএম
বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে মাদক মামলার আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রবা ফটো
বগুড়ায় বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে মাদক মামলার আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আদালতের তিন কর্মচারীসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার (১৬ অক্টোবর) বগুড়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তিন কর্মচারীসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
জালিয়াতির এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনের পাশাপাশি আরও চারজনকে মামলা করা হয়েছে। বগুড়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাকছুদুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার বিকালে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন- বগুড়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারি কামরুজ্জামান, জারীকারক এম এ মাসুদ, উমেদার হারুন অর রশীদ সাজন, জেলা আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বেঞ্চ সহকারি আব্দুল মান্নান এবং মাদক মামলার আসামি মোক্তার হোসেন।
চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাকছুদুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বগুড়া জেলা জজ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বেঞ্চ সহকারি আব্দুল মান্নানের ছেলে আবু সাহেদ, শহরের চারমাথা গোদারপাড়া এলাকার মোক্তার হোসেন, শহরে নূরানী মোড় এলাকার ওহেদুজ্জামান মাসুদ, নওগাঁ জেলা সদরের দোগাছী এলাকার আয়েশা আক্তার শিমু এবং তার ভাবী মরিয়ম আক্তার নিপুর কাছ থেকে প্রায় ৩ বছর আগে ২৬০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে এ নিয়ে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলাটি বিচারের জন্য বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক মির্জা শায়লার আদালতে স্থানান্তরিত হয়। চলতি বছরের ১৪ মে আদালতে ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। ওইদিন মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে আবু সাহেদ, মোক্তার হোসেন এবং ওহেদুজ্জামান মাসুদ আদালতে হাজির ছিলেন। অপর দুই আসামির মধ্যে আয়েশা আক্তার শিমু পলাতক এবং মরিয়ম আক্তার নিপুর পক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, গত ১৪ মে থেকে আদালতে ওই মামলার নথিটি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় ৫ মাস পর গত ১৪ অক্টোবর বিকালে সেই নথি খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে দেখা যায় যে, গত ১৪ মে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন মামলার প্রধান আসামি আবু সাহেদের পক্ষে মামলাটি স্থগিতের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৯ ধারায় আবেদন নথিভুক্ত দেখিয়ে তা মঞ্জুর করে আসামিদেরকে অব্যাহতির আদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু ওই আদেশে বিচারক মির্জা শায়লার যে স্বাক্ষর রয়েছে তা জাল। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই আদালতের জারীকারক এম এ মাসুদ ও বেঞ্চ সহকারি কামরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান যে, আসামি আবু সাহেদের বাবা আব্দুল মান্নানের অনুরোধে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অন্য আসামিদের যোগসাজশে তারা বিচারক মির্জা শায়লার স্বাক্ষর জাল করে মামলার কার্যক্রম স্থগিত এবং আসামিদের অব্যাহতির আদেশ তৈরি করে।
বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ বলেন, বিচারকের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনাটি আদালত থেকে তাকে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি শোনার পর আমরা আইনজীবীরা বিস্মিত হয়েছি। আমরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বগুড়ার কোর্ট পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে প্রথমে বগুড়া সদর থানায় পাঠানো হয়। মামলা রেকর্ড করার পর আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে রাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।