নাটোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩৩ পিএম
জলাবদ্ধতা নিরসনে চলছে খাল খননের কাজ। রবিবার বড়াইগ্রাম উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। প্রবা ফটো
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ ১০ বছর নাটোরের বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলার অন্তত চারটি বিলে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল স্থানীয় কৃষকরা। সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ৪০০ মিটার খাল খনন করেছে বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রশসান।
এতে করে দুই উপজেলার প্রায় ২ হাজার একর জমির ফসল ও পাঁচশ বসতবাড়ি জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হওয়ায় হাসি ফুটেছে হাজারো কৃষকের মুখে। আর খাল খননে বিনা পয়সায় দুই কৃষক জমি ছেড়ে দিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই খাল খনন রবিবার (১৫ অক্টোবর) শেষ হয়।
স্থানীয়রা জানায়, সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে চারটি বিলের আশপাশের প্রায় ৫০০ বসতবাড়ি। দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও দাবির মুখে জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেয় বড়াই উপজেলা প্রশাসন।
বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রাসেল জানান, দীর্ঘদিন বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলার মহেশ্বর, টিটিয়া মাঝগ্রাম, কচুয়া ও সুন্দরবাড়িয়া মৌজার চারটি বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। এতে প্রায় ২ হাজার একর জমিতে ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হতো। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো কৃষকরা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় কচুয়া বিল থেকে পাশের সরকারি খাল পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মিটার খনন করা হয়। তিন দিনের মধ্যেই খাল খনন সম্পন্ন হয়। আট ফুট প্রস্থ খাল খননে রাস্তার পাশের খাস জমি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া শামসুল ইসলাম নামে এক কৃষক দেড় বিঘা এবং ইসমাইল হোসেন নামে আরেকজন দুই শতাংশ জমি জনস্বার্থে ছেড়ে দিয়েছেন।
গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে দুই উপজেলার কৃষকরা জমিতে চাষাবাদ করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এবারও জলাবদ্ধতায় চারটি বিলের প্রায় ৮০০ হেক্টর জমির ধান ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। এ ছাড়া বিলের পানি উপচে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে আরও কমপক্ষে ৫০০ বসতবাড়ি। খাল খননের ফলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হলো।’
লালপুর উপজেলার মাঝগ্রামের কৃষক আতাউর রহমান বলেন, ‘বিলে আমার ১৭ বিঘা জমি রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ধান ডুবে যায়। এবারও অতিবৃষ্টিতে কিছু জমির ধান ডুবে গেছে, বেশিরভাগ জমির ধান ডোবার উপক্রম। তবে খাল খননের পর দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বোরহান উদ্দিন মিঠু বলেন, ‘সমস্যাটি জানার পর কাঁচা রাস্তাসংলগ্ন খাস জমি বের করা হয়েছে। এ ছাড়া দৌলতপুর গ্রামের শামসুল ইসলাম তার ব্যক্তি মালিকানা দেড় বিঘা এবং তার ভাগিনা ইসমাইল হোসেনের বাড়ির ভিটার দুই শতাংশ জমি জনস্বার্থে বিনামূল্যে ছেড়ে দিয়েছেন। পরে সরকারি খরচে দ্রুত খাল খনন করা হয়।’
ইউএনও আবু রাসেল বলেন, ‘জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সময়ের মধ্যে খালটি খনন করা হয়েছে। এতে দুই উপজেলার বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতার সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান হলো।’