গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩০ পিএম
গ্রাহককে না জানিয়ে তার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ১ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মেঘনা ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার (১১ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় গাজীপুরের উপপরিচালক মাজাহার আলী সরদার মামলাটি করেছেন।
আসামিরা হলেন- মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড নরসিংদীর মাধবদী শাখার জুনিয়র অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধর, একই শাখার সিনিয়র অফিসার ও ডেপুটি ম্যানেজার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. শাইখ মুত্তাকীন, ওই ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখার এফডিপি শাহ মিরাজ, নরসিংদী সদরের পশ্চিম কান্দাপাড়া এলাকার জীতেন্দ্র চন্দ্র দাসের ছেলে ও প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধরের স্ত্রীর বড় ভাই মনোজ কুমার দাস এবং প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধরের স্ত্রী চামেলী দাস।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের নরসিংদীর মাধবদী শাখায় জুনিয়র অফিসার প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধর গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাব খোলা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অভ্যন্তরীণ ফান্ড বা অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারসহ কাস্টমার সার্ভিসের কাজ করতেন। সেই সুযোগে তিনি নিরীহ কয়েকজন গ্রাহককে বেছে নিয়ে ফান্ড ট্রান্সফার করেন। প্রতারণার অংশ হিসেবে ব্যাংক শাখার ডেপুটি ম্যানেজার মো. শাইখ মুত্তাকীন গ্রাহকের আবেদন ছাড়াই অবৈধভাবে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করার জন্য ইনপুট দিয়ে ম্যানেজার শাহ মিরাজ বাবরের কাছে প্রস্তাব করলে ফান্ড ট্রান্সফার তিনি অনুমোদন করেন। যাতে গ্রাহক প্রকৃত লেনদেনের তথ্যসহ অবৈধ লেনদেনের তথ্য না পায়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, গ্রাহক নিতাই চন্দ্র সাহার নামে ফান্ড ট্রান্সফারের আবেদনপত্র প্রস্তুত করে গ্রাহকের জাল স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গ্রাহকের স্বাক্ষর নিজেই যাচাইকারী হিসেবে ভেরিফায়েড স্বাক্ষর দেন। পরে শাখার ডেপুটি ম্যানেজার শাইখ মুস্তাকীন অথবা ম্যানেজার শাহ মিরাজ বাবরের অনুমোদন নিয়ে এই অ্যাকাউন্টে ১৬টি ডেবিট লেনদেন করেন। এভাবে মোট ৮০ লাখ টাকা ও পাঁচটি ক্রেডিট লেনদেনে মোট ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ট্রান্সফার করায় শুধু গ্রাহক নিতাই চন্দ্র সাহার ব্যাংক হিসাবে ১৫ লাখ টাকা ঘাটতি পড়ে।
একইভাবে খোরশেদ আলমের অ্যাকাউন্টে চারটি ডেবিট লেনদেনে মোট ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও দুটি ক্রেডিট লেনদেনে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ট্রান্সফার করে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে ৪ লাখ টাকা ঘাটতি ফেলে আত্মসাৎ করেন। এমনিভাবে ব্যাংকের গ্রাহক লোকমান মিয়ার অ্যাকাউন্টে ৩৩টি ডেবিট লেনদেনে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও তিনটি ক্রেডিট লেনদেনে ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ট্রান্সফার করে তার ব্যাংক হিসাবে ৮২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘাটতি ফেলে আত্মসাৎ করেন।
এ ছাড়া ব্যাংকের গ্রাহক হারিজ মিয়ার অ্যাকাউন্টে একটি ডেবিট লেনদেনে পাঁচ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে তার পাঁচ লাখ টাকা ঘাটতি ফেলে তারা পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করেন। তারা চারজন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ব্যাংকের ১ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
গাজীপুরের উপপরিচালক মাজাহার আলী সরদার জানান, আসামিরা যোগসাজশে প্রতারণা করে ১ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। মামলা তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবে দুদক।