চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩৬ এএম
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৪৩ এএম
পদ খালি থাকলেও নানা জটিলতায় জনবল নিয়োগ দিতে না পারায় মহানগরবাসীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বিদ্যমান অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করার দাবিতে শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্দোলন, চসিকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে চলমান মামলা আর ২০২০ সালে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
চসিক কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে এ সংস্থায় ৪ হাজার ২২৬ স্থায়ী পদের বিপরীতে কর্মরত ২ হাজার ৬৩৫ জন। বাকি ১ হাজার ৫৯১টি স্থায়ী পদ শূন্য। ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট চসিক ‘নগরীর আয়তন ও লোকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চসিকের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায়’ বিদ্যমান ৪ হাজার ২২৬ জনবলের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৯৭৮টি জনবল যুক্ত করে ৯ হাজার ৬০৪টি পদে উন্নীত করার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। প্রায় তিন বছরেও সেই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। বর্তমানে প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রস্তাবিত জনবলকাঠামো অনুমোদন না পাওয়ায় বর্তমানে চসিক বাধ্য হয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ পদ্ধতিতে অস্থায়ী কর্মী দিয়ে মহানগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অস্থায়ী কর্মী দিয়ে দেওয়া সেবার মান নিয়ে মহানগরবাসীর মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ পদ্ধতিতে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা লোকেরা সেবা প্রদানে তেমন আন্তরিক থাকে না। তার পরও সেবা চালু রাখার স্বার্থে চসিক এরই মধ্যে ৬ হাজার ১৩৫ জনকে দৈনিক ভিত্তিতে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে সেবা চালু রেখেছে।
এ প্রসঙ্গে চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দুই বছর আগে চসিকের পক্ষ থেকে জনবল সংকট কাটিয়ে তুলতে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছিল। সেটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। জনবল সংকটের কারণে নগরবাসীকে সঠিকভাবে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি আড়াই হাজার কোটি টাকার ‘এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ২৬৭ কোটি টাকার কোভিড প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চসিক। প্রকল্প দুটিতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পরিকল্পনা থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত জনবলও নেই। এর পাশাপাশি করপোরেশনের কার্যক্রম ও জনগণের সেবার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু অবসর, মৃত্যু ও স্বেচ্ছায় চাকরি ত্যাগ ইত্যাদি কারণে ক্রমাগত পদ খালি হচ্ছে। তাই শিগগিরই জনবল সংকট নিরসন হওয়া প্রয়োজন।
চসিকসূত্রে আরও জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে পত্রিকায় তিনবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলন ও উচ্চ আদালতের মামলা চলমান থাকায় নিয়োগ দিতে পারেনি চসিক। এ সময় চসিকে বিভিন্ন সময় অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া শ্রমিকদের স্থায়ীভাবে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করে শ্রমিক সংগঠনগুলো। এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় প্রায় ২০০ কর্মচারী অবসরে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক কর্মকর্তা বলেন, চসিকের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে শূন্যপদে নিয়োগ অপরিহার্য হয়েছে। মামলা জটিলতার কারণে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জনবল সংকটে থাকা চসিকের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া ক্রমে কঠিন হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প কোনো পথ খোলা না থাকায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ২ হাজার অস্থায়ী শ্রমিকের শূন্যপদে লোক নিয়োগ দিয়ে সেবা কার্যক্রম সচল রাখার চেষ্টা করছে।