× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নদীভাঙন

‘বাবার কব্বরডাও নদী ভাঙে নিছে’

নাঈম ইসলাম, শেরপুর

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৩৩ পিএম

ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। মঙ্গলবার শেরপুরেরে নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকা। প্রবা ফটো

ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। মঙ্গলবার শেরপুরেরে নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকা। প্রবা ফটো

‘বাপু, ওই যে পানিতে একটা খুঁটি দেখা যায়, সেখানেই আমার বাবার কব্বর (কবর) ছিল। এটা ছিল আমাদের ভিটে, রাক্ষুসে ব্রহ্মপুত্র বাবার কব্বরটা নিয়ে গেল। খুউব (খুব) চেষ্টা করেও বাবার কব্বরটা ভিটেতে রাখতে পারলাম না। এর চেয়ে দুঃখের কিছু নাই।’- এই বলেই হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল শেরপুরের নকলা উপজেলার দক্ষিণ নারায়ণখোলা গ্রামের জহুরুল ইসলাম। ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে দিশাহারা শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকার নদীতীরবর্তী মানুষের।

সরেজমিনে জানা যায়, গত ১০ বছরে ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, শত শত একর আবাদি জমি, মসজিদ, কবরস্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের ভাঙনে নদীগর্ভে গেছে প্রায় দেড়শ একর আবাদি জমি ও অন্তত ৫০টি বসতভিটা।

স্থানীয় বাসিন্দা নূরে আলম বলেন, সম্প্রতি চতুর্থ দফার ভাঙনে গত রবিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে জহুরুল ইসলামের বাবার কবরসহ অন্তত পাঁচটি কবর। হুমকিতে রয়েছে বহু বাড়িঘর ও আবাদি জমি।

স্থানীয় মুদিদোকানি সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ছোট্ট একটা মুদিদোকান দিয়ে সংসার চালাতাম। দোকানটাই আমার শেষ সম্বল ছিল, নদীভাঙনে দোকানটাও শেষ। এখন কী করব, চিন্তায় দিশা পাচ্ছি না।’

বৃদ্ধা হোসনা আরা বানু বলেন, ‘আমার জামাইয়ের ভিটা এইডা (এটা)। নদী আমগোর (আমাদের) সব শেষ কইরে দিছে। রাতে ঘুমাইতেও ডর (ভয়) হয়, কখন নদীতে ঘরটা চইল্লা যায়। কত মেম্বার চেয়ারম্যান আইলো আর গেল, কামের (কাজের) কাম (কাজ) কেউ করেনি।’

গৃহিণী মোমেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার পুলাডারে এই রাক্ষুসে নদী নিয়ে গেছেগা। আল্লাহর কাছে সবুর দিছি। এখন ঘর সরাইতেছি, নদীতে এবার যে ভাঙন শুরু অইছে তাতে দুই-এক দিনের মধ্যে আমার ঘরটা চইল্লা যাবো। বছরে বছরে ঘর সরানো খুব মুশকিল। স্থায়ী একটা বাঁধ দিলে এমন সমস্যা আর অইতো (হতো) না।’

ষাটোর্ধ্ব কৃষক মজিবর রহমান বলেন, ‘দুই কিলোমিটার দূরের নদী আইসা আমগোর সব শেষ করে দিতেছে। যা জমি ছিল বেশিরভাগই নদীর মধ্যে। এই এলাকায় ব্লক না দিয়া ঠুকুর-ঠাকুর (লোক দেখানো) কাজ কইরা আমাদের কোনো উপকার নাই, শুধু অফিসারদের পকেট ভরে। আমরা কোনো ত্রাণ চাই না, স্থায়ী সমাধান চাই।’

কৃষক ছামিদুল হক বলেন, ‘আমার জমি সব নদীত গেছে গা। আমগোর পাড়ার স্কুল, গোরস্তান, দোকানপাট, বাড়িঘর এ নদী গিলে খেয়েছে। স্যারেরা আহে (আসে) আর বালুর কয়ডা বস্তা ফেলায় চইল্লা যা। এইসব বস্তায় কোনো লাভ নাই। ব্লক কইরা বান্ধন মারতে অইবো (হবে)। তা না হলে আমরা মরছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন মোকাবিলায় এ বছর দুটি দরপত্রে প্রায় ৮৫ লাখ টাকার ৩৩০ মিটার জরুরি আপদকালীন অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ হাতে নিয়েছে পাউবো। তবু ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। 

নকলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার বলেন, ‘এই নদীর ভাঙনে অনেকের বাপ-দাদার জমি-ভিটা বিলীন হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীও বিষয়টা জানেন। আশা করছি দ্রুত এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধান আসবে।’

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, নকলা এলাকার নদীভাঙন প্রতিরোধে নকশা প্রণয়ন, অনুমোদনসহ কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা