জয়পুরহাট চিনিকল
চম্পক কুমার, জয়পুরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩ ১২:০০ পিএম
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৮ পিএম
জয়পুরহাট চিনিকলে বছরের পর বছর ধরে ঝোপ-জঙ্গলে পড়ে আছে হাজার হাজার কেজি পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ। লোহা-অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের পরিত্যক্ত এসব যন্ত্রাংশ খোলা আকাশের নিচে অবহেলা অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। প্রবা ফটো
জয়পুরহাট চিনিকলে বছরের পর বছর ধরে ঝোপ-জঙ্গলে পড়ে আছে হাজার হাজার কেজি পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ। লোহা-অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের পরিত্যক্ত এসব যন্ত্রাংশ খোলা আকাশের নিচে অবহেলা অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। এগুলো বিক্রি না করায় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
চিনিকল কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত এসব যন্ত্রাংশ নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করলে কোটি টাকার রাজস্ব পেত বলে জানিয়েছেন মিলটির শ্রমিকরা। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, নিলাম দরপত্র আহ্বান করে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। আবার নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত জয়পুরহাট সুগার মিলস লিমিটেডে ১৯৬৩-৬৪ সাল থেকে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর দৈনিক আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রার ক্ষমতা ২ হাজার ৩২ টন হয়।
মিলটিতে সাত শতাধিক স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মৌসুমি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতিবছরই নানা কারণে লোকসানের বোঝা টানতে টানতে এখন পর্যন্ত ছয়শ কোটি টাকা লোকসান ছাড়িয়ে গেছে। মিলটি চালু হওয়ার কয়েক বছর পর থেকে অকেজো যন্ত্রাংশ জড়ো হতে থাকে। এখন তা অনেক যন্ত্রাংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জায়গা না থাকায় এগুলো চিনিকলের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েক বছর আগে নিলাম ব্যবস্থা করে নির্ধারিত দর পাওয়া যায়নি। এ কারণে নিলাম বাতিল করা হয়েছিল।
চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশগুলো রাখার আলাদা জায়গা নেই। এ কারণে চিনিকল চত্বরের গ্যারেজ অংশের পাশে ফাঁকা জায়গায় রাখা হয়েছে। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। পরিত্যক্ত এসব যন্ত্রাংশের মধ্যে লোহা-অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত রয়েছে। পরিত্যক্ত এসব যন্ত্রাংশের ওজন কমপক্ষে ৩০০-৪০০ টন হবে। পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশের দাম কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কয়েক বছর আগে কিছু যন্ত্রাংশ নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে ঝামেলা ও কাঙ্ক্ষিত দাম মেলেনি। পরবর্তীকালে নিলাম দরপত্রটি বাতিল করা হয়।
চিনিকল গ্যারেজের চুক্তিভিত্তিক ওয়েলডার আব্দুল হামিদ বলেন, আমি ২০০৫ সাল থেকে জয়পুরহাট চিনিকলে চাকরি করছি। তখনই গ্যারেজ এলাকায় যন্ত্রাংশগুলো পড়ে থাকা দেখছি। এসব যন্ত্রাংশের মধ্যে এসএস লোহা, এমএস স্টিল, তামা ও ইস্পাত রয়েছে। যন্ত্রাংশগুলোর ওজন সাড়ে চারশ থেকে পাঁচশ টন হতে পারে বলে ধারণা করছি। কখনও নিলামে বিক্রি হতে দেখিনি। চিনিকল চালুর সময়কারও অকেজো যন্ত্রাংশ রয়েছে।
চিনিকলের কৃষি বিভাগের পরিবহন শাখার ওয়েলডার হেলপার মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, আমি ২০০০ সাল থেকে এখানে যোগদান করেছি। তখন থেকে লোহাগুলো পড়ে থাকতে দেখছি। যন্ত্রাংশগুলো ভালো জায়গায় রাখলেও কয়েক দিন পর গাছগাছালিতে ভরে যায়। লোহার অকেজো যন্ত্রাংশগুলো অনেক দিনের হলেও এখনও ভালো রয়েছে।
জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আলী আকতার বলেন, চিনিকলের পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এগুলো নিলামে বিক্রির জন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। তারা নিলামের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশগুলো বিক্রি করলে রাজস্ব আসবে। আমরা গত দুই মাসের বকেয়া পাব। সেখান থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা টাকা দেওয়া সম্ভব হতো।
চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখলাছুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ইতঃপূর্বে চিনিকলের লোহার অকেজো যন্ত্রাংশগুলো নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায়নি। এ কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছিল। আবারও দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রাংশ নিলামের জন্য কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি যন্ত্রাংশের পরিমাপ করছে।