হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩ ১০:২১ এএম
চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ফটো
চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে না পারাসহ নানা কারণে পণ্য আমদানিতে নেতিবাচক প্রবাহ চলার পরও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব বেড়েছে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যেখানে ১৫ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়, সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় এবার প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আয় বেড়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অথচ বন্দরের আমদানি পণ্য খালাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কয়েক মাস ধরেই পণ্য খালাস কমেছে। খালি থাকছে বন্দরের ইয়ার্ড।
আমদানিতে নেতিবাচক প্রবাহ বিরাজ করার পরও কাস্টমস হাউসের রাজস্ব বাড়ার পেছনে পণ্য আমদানিতে শুল্ককর বৃদ্ধিসহ আমদানি করা পণ্যের মূল্য নির্ধারণে কাস্টমস হাউসের কড়াকড়ি আরোপ করাকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ডলার সংকট নিরসনে বিলাসপণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। যে কারণে এখন ফলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ককর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কাস্টমস কর্মকর্তারা আমদানি করা পণ্য শুল্কায়নে ঘোষিত মূল্যের চেয়ে শুল্কায়ন মূল্য বেশি নির্ধারণ করছেন। আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় রাজস্বও বাড়ছে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আমদানি পণ্য শুল্কায়নে বেশি মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে না। আমদানিকারকরা রাজস্ব কম দেওয়ার জন্য অনেক সময় আমদানি পণ্যের মূল্য কম দেখায়। কাস্টমস হাউসের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপ করায় এখন সেটি পারছে না। আন্তর্জাতিক বাজারদর বিশ্লেষণ করেই এখন শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।’
রাজস্ব বৃদ্ধির পেছনে তিনি আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দেখছেন। ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, আমদানি পণ্য শুল্কায়নে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমদানি করা পণ্যের প্রতিটি চালান এখন ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। যে কারণে কেউ শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়েছে। আমদানি মূল্যের ওপর ভিত্তি করে শুল্কায়ন করা হয়। তাই পণ্যের দাম বাড়ায় এখন রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে।
কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আদায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিগত দুই অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আদায় হয়েছিল ১২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকায়। রাজস্ব আরও ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আদায় করা হয় ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় হয় ৫ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
যেখানে আগের অর্থবছরের জুলাইয়ে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। একইভাবে চলতি অর্থবছরের আগস্টে রাজস্ব আদায় হয় ৫ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। যেখানে ২০২২-২৩ সালের আগস্টে আদায় করা হয় ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায় হয় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যেখানে আগের অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে আদায় হয়েছিল ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ৪১১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হলেও বিগত অর্থবছরের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। এর পেছনে শুল্ককর ও পণ্যের দাম বৃদ্ধিই অন্যতম কারণ।
কয়েকটি পণ্যের আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটি জানা গেছে। আপেল আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পণ্যটি আমদানি করা হয় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই পণ্য আমদানি ৩৬ শতাংশ কমে যায়। ৮৭ হাজার ২৪৭ টন কমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আপেল আমদানি করা হয় ১ লাখ ৫১ হাজার ২১৬ টন। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আপেল আমদানি ৮৭ হাজার টন কমলেও রাজস্ব আদায় কমেনি। আপেল আমদানি খাত থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮০৪ কোটি টাকা, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে হয় ৮০৩ কোটি টাকা।
আমদানি কমে যাওয়ার পরও রাজস্ব আদায় বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমদানি কমে যাওয়ার পরও কাস্টমস হাউসের রাজস্ব বৃদ্ধির মূল কারণ ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি। গত অর্থবছরে যেখানে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা, সেখানে এখন ১১৫ টাকা। ৩০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির কারণে এখন রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, দেশে এখন বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান থাকায় অনেক বেশি পাথর, সিমেন্টের ক্লিংকার আমদানি হয়েছে। এর ফলেও রাজস্ব আদায় বাড়ছে। আর অন্য কারণটি হলো মূল্য বৃদ্ধি দেখিয়ে শুল্কায়ন। আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বেশি হলে রাজস্ব আদায়ও বাড়ে। এসব কারণে পণ্য আমদানির পরিমাণ কমলেও রাজস্ব আদায়ের ট্রেন্ড ইতিবাচক রয়েছে।