× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভোগান্তি

আশ্বাসেই পার ৫০ বছর

জামালপুর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:০১ পিএম

জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দিতে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিতে হয় হাজারো মানুষের। প্রবা ফটো

জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দিতে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিতে হয় হাজারো মানুষের। প্রবা ফটো

জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু না থাকায় চার যুগ ধরে চরাঞ্চলের মানুষ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করছেন। সময়মতো মেলে না ভরসার নৌকাও। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি, তুলশীরচর এবং শেরপুরের নকলা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের। 

এ জনপদের মানুষকে জেলা ও উপজেলা সদরে যাতায়াতে পাড়ি দিতে হয় ব্রহ্মপুত্র নদ। নরুন্দিতে রয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, ইউনিয়ন পরিষদ, হাসপাতাল, রেলস্টেশন ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক ও পেশাজীবীরা নৌকাযোগে নদী পারাপার হয়ে থাকেন।

সেতু না থাকায় চরাঞ্চলের কৃষকরা পাচ্ছেন না তাদের উৎপাদিত সবজি ও পণ্যের ন্যায্য মূল্য। চরের কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারে না। কোনো মুমূর্ষু রোগীকেও সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। বর্ষাকালে নৌকাডুবির ঝুঁকিসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে যাতায়াত করতে হয় এ জনপদের কয়েক লাখ মানুষকে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ অঞ্চলের মানুষ ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতুর দাবি করে আসছে। 

সেতুটি নির্মাণ হলে চরাঞ্চলের মানুষের শিক্ষা-স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ছাড়াও নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সঙ্গে জামালপুর, ময়মনসিংহ ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে বলে জানান এ অঞ্চলের মানুষরা। 

তুলসীরচরের মানিকারচর গ্রামের হান্নান শেখ বলেন, আমাদের এ অঞ্চল কৃষিনির্ভরশীল এলাকা। এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। কিন্তু এখানে সেতু না থাকায় সময়মতো কোনো পণ্য শহরে নেওয়া যায় না। এতে করে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ডৌয়াতলা এলাকার ইউসুফ আলী জানান, এমন এলাকায় বসবাস করি আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। নেতা পরিবর্তন হয়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। স্বাধীনতার পর থেকে শুধু আশ্বাস পেয়ে গেলাম। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েই গেল এখানে ব্রিজ হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্রিজ হয়নি। আর আমাদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়নি। 

সাবিহা বেগম জানান, এখানে সেতু না থাকায় আমাদের অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এখানে অ্যাম্বুলেন্স আসার কোনো উপায় নেই। অন্য জায়গা দিয়ে ঘুরে আসতে চাইলেও ৪-৫ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাই এখানে কোনো মুমূর্ষু রোগীকে সময়মতো হাসপাতালেও নেওয়া যায় না। 

নরুন্দি স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আঁখি আক্তার জানান, অনেক সময় নৌকা পাওয়া যায় না। যার ফলে বিভিন্ন সময় পরীক্ষায় ও ক্লাসে সময়মতো যেতে পারি না। শুকনা মৌসুমে নৌকায় চলাচল করা গেলেও বর্ষার সময় যখন নদী ভরা থাকে, তখন এখান দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই সেসময় আমরা কলেজেও বেশি একটা যাই না। 

আরেক শিক্ষার্থী দিশা খাতুন বলেন, এখানে নৌকার অনেক সমস্যা। ৩০ মিনিট পরপর একটি করে নৌকা চলে। একটি নৌকা ঠিক সময়ে ধরতে না পারলে, আরেক নৌকার জন্য ৩০ মিনিট বসে থাকতে হয়। অনেক সময় নৌকাই পাওয়া যায় না। এভাবে আমাদের অনেক ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে সমস্যা হয়। 

নরুন্দি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কাজী মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, চরাঞ্চলের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী আমার এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। এখানে একটি সেতু না থাকায় শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ সময়ে প্রতিষ্ঠানে আসতে পারে না। আর যারাও আসে তারাও সময়মতো আসতে পারে না। এতে করে তাদের পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে অনেক অভিবাবক ঝুঁকি নিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চান না। তাই এখানে একটি সেতু হলে সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হবে। 

নরুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, সেতুটি বাস্তবায়ন হলে চরাঞ্চলসহ দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ সাধারণ মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে আসতেও অসুবিধা হবে না। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবে। এতে করে কৃষকরাও তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। 

জামালপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, এই সেতু বাস্তবায়ন হলে নদীর দুই পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি এসব মানুষের ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটবে। এখানে প্রতিদিন দুই জেলার লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। তাই এই ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি।

জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক জানান, নরুন্দি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতুটি নির্মাণ হলে দুই জেলার চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। তাই ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, প্রকল্প অনুমোদন হলেই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা