× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাহিরে গ্লানি, ভেতরে কষ্টের জীবন

আলমগীর হোসেন, জামালপুর

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:০২ পিএম

জামালপুরের রানীগঞ্জ পতিতালয়। প্রবা ফটো

জামালপুরের রানীগঞ্জ পতিতালয়। প্রবা ফটো

সাথি আক্তার (ছদ্মনাম)। বয়স ২৮। বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলায়। ছিল সুখের সংসার। হঠাৎ স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় কাজের সন্ধানে যান গাজীপুর। কোনো কাজ না পেয়ে পরিচিত একজনের মাধ্যমে জড়িয়ে পড়েন যৌনকর্মে। কখন যে এ পেশায় সক্রিয় হয়ে উঠলেন, তা বলতে গেলে নিজেও জানেন না। প্রথমে তার তিন বছরের জন্য ঠাঁই হয়েছিল টাঙ্গাইলের কান্দারপাড়া পতিতালয়ে। সেখান থেকে বর্তমানে আছেন জামালপুরের রানীগঞ্জ পতিতালয়ে।

সরেজমিনে কথা হয় সাথির সঙ্গে। তিনি জানান, এখানে কেউ ইচ্ছে করে আসেন না, নিরুপায় হয়েই আসেন। তার এ কাজ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না বলেই এ পেশায় আসতে হয়েছে। এখানে যারা এসেছেন তারা কেউই ইচ্ছে করে আসেননি, অন্যকিছু করার উপায় না পেয়ে কিংবা ফাঁদে পড়েই অধিকাংশ যৌনকর্মী এ পেশায় জড়িয়ে পড়েন।

সাথি আরও জানান, এখানে আসার পরে প্রথমে অনেক কাস্টমার (গ্রাহক) পেতেন। তখন দিনে ১৫-২০ লোক আসত। দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে কাস্টমার কমে গেছে। এখন দিনে ২-৩ জনও আসে না। সবকিছুর দাম বাড়ার সঙ্গে ঘর ভাড়া দিয়ে নিজেদের পেট চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। নেই স্বাস্থ্যের তেমন যত্ন, চিকিৎসাসেবা কিংবা সুখের সন্ধান।

শুধু সাথিই নয়, শত শত নারীর গল্প এমনই। বিউটি, সুইটি, তমা, মোনালিসা, শাবনূরসহ অনেকেই জানান তাদের দুঃখ ও হতাশার কথা। যারা অন্যের মনোরঞ্জনে নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্ভ্রম ও দেহ বিলিয়ে দেন, তাদের মনের খবর রাখে না কেউ।

যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘আশার আলো সোসাইটি (সুখপাখি)’ সূত্র জানায়, রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে প্রায় ১৪০টি ঘরে প্রায় ১৫০ যৌনকর্মী রয়েছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন ৩০-৩৫ সর্দারণী।

এনজিওটির স্বাস্থ্য সহকারী মাহবুবা শাহরিন মনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মেয়েদের আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যৌনরোগ সম্পর্কে সচেতন করি। কিন্তু তারা এসব রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে চান না। এখানে নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণির লোক আসে। যার বেশিরভাগ লোকজন দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনাগ্রহী। কাস্টমারদের ইচ্ছা ও বেশি টাকার লোভে বেশিরভাগ মেয়েই প্রতিনিয়ত অনিরাপদ যৌনমিলন করে থাকে। এতে করে এইচআইভিসহ (এইডস) বিভিন্ন ধরনের প্রাণঘাতী যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

তিনি আরও জানান, গত এক মাসে এই পল্লীর ৫৮ যৌনকর্মীর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ৬ জন সিফিলিয়ায় আক্রান্ত। এ রোগটি অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা আরেক সংস্থা ‘সূর্যের হাসি সমাজকল্যাণ সংগঠন’র উপদেষ্টা মো. মফিজ উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যৌনকর্মীদের তেমন খোঁজখবর নেওয়া হয় না। এসব বেসরকারি এনজিওকর্মীরাই তাদের নিয়ে কাজ করেন। এখন এ যৌনপল্লীতে গ্রাহকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যার ফলে যৌনকর্মীদের আয়ও কমে গেছে। বর্তমানে অনেক মেয়েই এ পল্লী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন যারা বাইরে গিয়ে ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। ফলে যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।

কনিকা আক্তার (ছদ্মনাম) নামে এক যৌনকর্মী বলেন, আমরা সব মেয়েই এখানে সর্দারণীর (বাড়িওয়ালীর) কাছে জিম্মি। তাই এখানে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবার সুযোগ নেই। পল্লীতে এখন এমনিতেই গ্রাহক কম আসে। তাই সবাই যেকোনো উপায়ে গ্রাহক নিজের কাছে নিতে মরিয়া হয়ে থাকেন। তাই গ্রাহকদের খুশি করতেও অনেক সময় কনডম ব্যবহার করতে পারি না।

পল্লীর সর্দারণী (বাড়িওয়ালী) শিল্পী বেগম জানান, ‘আগে এখানে দিনরাত কাস্টমারে ভরা থাকত। এখন কাস্টমার খুবই কম আসে। যার জন্য মেয়েদের (যৌনকর্মী) নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর আগের মতো কনডম ফ্রি দেওয়া হয় না, তাই কনডম কিনে অনেকেই ব্যবহার করতে চায় না।’

এসব ব্যাপারে প্রাবন্ধিক ও গণমাধ্যমকর্মী জাকারিয়া জাহাঙ্গীর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগকে পর্যাপ্ত তৎপর হতে হবে। যারা এ পেশা ছাড়তে চান, তাদের পুনর্বাসন ও বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি। রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে মাদকসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ এবং ভাসমান যৌনকর্মীদের মাধ্যমে অনিরাপদ যৌনমিলনে যাতে যৌনবাহিত রোগের বিস্তার না ঘটে এ ব্যাপারেও স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। 

যৌনপল্লীর ওয়াচ কমিটির সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, যৌনকর্মীরা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে সঙ্গে যারা সেখানে যাচ্ছেন তারাও বিভিন্ন রোগ বহন করে নিয়ে আসছেন। তাই মাসে একবার হলেও একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে ওইসব যৌনকর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি।

সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস জানান, যৌনকর্মীদের হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর কোনো যৌনকর্মী হাসপাতালে না আসতে পারলে, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা