শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম
যোগিনীমুড়ার সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পরে সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি এক যুগেও। প্রবা ফটো
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুরের যোগিনীমুড়ার সেতুটির অর্ধেক অংশ ঝুলে আছে এক যুগ। মৃগী নদীর প্রবল স্রোতে সেতুর ১০টি পিলারের ৪টি বিলীন হয়ে যায়। পরে আর সংস্কার না করায় দাঁড়িয়ে আছে অর্ধেক সেতু। এতে চরম দুর্ভোগে আছে অন্তত ৮ গ্রামের মানুষ। দ্রুতই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
স্থানীয়রা জানান, সেতু নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই বন্যায় অর্ধেক অংশ ভেসে যায়। এতে দুই পারের মানুষের চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। যোগিনীমুড়া, নামাপাড়া, কাজিরচর, খড়িয়াপাড়া, ঝিনিয়াপাড়া, নিচপাড়াসহ আশপাশের আট-দশ গ্রামের মানুষের যাতায়াত ছিল এ সেতু দিয়ে। জনপ্রতিনিধিদের বারবার বলার পরও কোনো কাজ হয়নি। দ্রুত সেতুটি পুনর্নির্মাণের দাবি তাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুটির ১০টি পিলারের মধ্যে ৪টি নদীতে চলে গেছে। আর বাকি ৬টি পিলারের ওপর অর্ধেক সেতু দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা সেতুটির নিচ দিয়ে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াত করছে। ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ পথে যাতায়াত করে শতবর্ষী যোগিনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেতু না থাকায় নদীর ওপারের অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছেন। এ ছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যোগিনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলে, ‘আমার বাড়ি নদীর ওপারে খড়িয়াপাড়ায়। ভাঙা সেতুর কারণে সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হয়। বেশ কয়েকদিন পা পিছলে সাঁকো থেকে পড়ে গিয়েছি। এখানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’ প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘নদীর ওপারে আগে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু পারাপারের ভয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।’
ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় নদীর ওপার থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী আসত। সেতু না থাকায় অনিরাপদ যাতায়াতের কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
খড়িয়াপাড়ার কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘জনিপ্রতিনিধিরা ভোটের আগে কথা দিলেও পরে আর খোঁজ রাখে না। আমাদের উৎপাদিত সবজি, ধান, পাট বিক্রি করা মুশকিল। কম দামে বিক্রি করতে হয়।’
কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নিয়ামত উল্লাহ নিমু বলেন, ‘মৃগী নদীর ওপর এ সেতুটি নির্মাণের পরই নদীতে অর্ধেক ভেঙে পড়ে। আমাদের ছেলেমেয়েরা নদীর ওপারে যোগিনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করে। কষ্ট করে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কাঁচা সড়কে কাদা মাড়িয়ে সাঁকো বেয়ে যেতে হয়। এতে সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। দ্রুত সেতুটি নির্মাণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
চরশেরপুরের ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নাঈম আহম্মেদ মনি, ‘নদীর ওপারে চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীমারা খড়িয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে যোগিনীমুড়ায় আসতে হয়। এ এলাকার অনেক শিক্ষার্থী ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসা ও যোগিনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসতে পারছে না। যোগিনীমুড়া, নামাপাড়া, নিচপাড়া, খড়িয়াপাড়াসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের নদী পার হয়ে কৃষিকাজ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।’
জানতে চাইলে শেরপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শেরপুর নামে একটি নতুন প্রকল্পে যোগিনীমুড়া সেতুটি নির্মাণের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।’