রংপুর অফিস
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৪৪ পিএম
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী গ্রামের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্শাণ করা বাঁধ তিস্তার তীব্র স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে। প্রবা ফটো
উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরে বৃদ্ধি পাওয়া তিস্তা নদীর পানি কমে গেছে। বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে তিস্তার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টের পানি। গত বুধবার রাত থেকে ক্রমান্বয়ে কমছে তিস্তার পানি। এদিকে তিস্তায় রেকর্ড পরিমাণ পানি বৃদ্ধি ও বন্যার শঙ্কায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ গতকাল বৃহস্পতিবার ঘরে ফিরে গেছে।
তিস্তার তীব্র স্রোতে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক বাঁধের আড়াইশ ফুট অংশ ভেঙে গেছে। এতে করে পশ্চিম ইচলীর আবুল কালাম, মো. রাজ্জাক ও আব্দুর রহমানের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ১০ হেক্টর আমনের ক্ষেত। হুমকির মুখে রয়েছে মন্দির, ঈদগাহসহ অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সিকিমে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বুধবার তিস্তা নদীবেষ্টিত উত্তরের পাঁচ জেলায় ভয়াবহ বন্যার সতর্কতা জারি করে পাউবো। তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কার তথ্য দেয়। এতে করে দুপুর থেকে মাইকিং ও নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সার্বিক তদারকিসহ স্থানীয় প্রশাসন জরুরি প্রয়োজনে কিংবা দুর্গতদের উদ্ধারে হটলাইন চালু করে। তবে রাত ৯টা থেকে পানি কমতে শুরু করে এবং রাত ১১টায় ওই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে যায়। গতকাল বেলা ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার নদের পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। বিগত ২৪ ঘণ্টা বৃদ্ধি পাওয়া তিস্তা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকবে।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিনবিনা থেকে চর শংকরদহ পর্যন্ত বাঁধের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু পাউবো আশ্বাস দিয়েও কাজ করেনি। পরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বালুর বাঁধ দিয়ে কয়েক বছর চরবাসী ও ফসলি জমিকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তিস্তার তীব্র স্রোতে সেই বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে করে এলাকার তিনটি বাড়ি নদীতে বিলীন হওয়াসহ একরের পর একর আমনের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে দুটি মন্দিরসহ, ঈদগাহ, অর্ধশতাধিক বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, ‘পশ্চিম ইচলীকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য পাউবোকে জানানো হয়েছে। পানি কমে এলে সেখানে কাজ শুরু করবে। এ ছাড়া গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যক্তিদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বন্যা-ভাঙন থেকে উপজেলার মানুষকে রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’
তিস্তায় জেলের জালে ৩৮ কেজির বাগাড়
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে ধরা পড়েছে ৩৭ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের গ্রামের বাগাড় মাছ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে পূর্ব ইচলীর আব্দুল মতিনের ঝাঁকি জালে ধরা পড়ে মাছটি। তিনি জেলে পড়ার মাছ ব্যবসায়ী মো. আবুর কাছে ৪৮ হাজার টাকায় মাছটি বিক্রি করেন।
আব্দুল মতিন বলেন, ‘ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরতেছিনু। হঠাৎ করে মাছ কোনা জালোত আটকি গেইছে। অনেক কষ্ট করি তুলি ডাঙ্গাত নিয়া আসছিনু। পরে সেইটা ৪৮ হাজার টাকা বিক্রি করছি। এত বড় মাছ প্যায়া বন্যার ক্ষতির দুঃখ থাকিল না।’