কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৪২ পিএম
চরজাঙ্গালিয়া এলাকার হাবিব উল্যার ছেলে হারুনুর রশিদ মেসার্স হাবিব মেডিকেল হলের অনুকূলে চরলরেন্স বাজারে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের শাখা। প্রবা ফটো
দুই ভাইয়ের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ফাঁদে পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার। এতে সঞ্চয়ের প্রায় ২০ কোটি টাকা খুইয়েছেন তারা। এ ঘটনায় গ্রাহকরা প্রতিদিন ব্যাংকের সামনে গিয়ে ভিড় করছেন। টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে কমলনগরের চরজাঙ্গালিয়া এলাকার হাবিব উল্যার ছেলে হারুনুর রশিদ মেসার্স হাবিব মেডিকেল হলের অনুকূলে চরলরেন্স বাজারে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের শাখা চালু করেন। পরে ২০২৩ সালের শুরুতে তিনি তার বড়ভাই মহিউদ্দিন মাহমুদ কুতুবের মেসার্স লাবিবা এন্টারপ্রাইজের নিকট হস্তান্তর করেন। এর পর থেকে কুতুব নিজেই ওই এজেন্ট ব্যাংকটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। এসময়ে তারা দুই ভাই ভালো আচরণের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেন।
ফলে কম সময়ে ওই শাখায় টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন অনেক গ্রাহক। এর বিপরীতে তাদের চেকও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের দুই উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন মাহমুদ কুতুব ও হারুনুর রশিদ এই টাকা ব্যাংকিং হিসাবে জমা না করে নিজেরা আত্মসাৎ করেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে মহিউদ্দিন মাহমুদ কুতুব উধাও হয়ে যাওয়ার পর এজেন্ট শাখাটি বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধান মিলছে না ছোট ভাই হারুনুর রশিদেরও।
স্থানীয়রা জানান, কুতুব ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য এলাকার চাকরিজীবী, প্রবাসী ও ধনী পরিবারের লোকজনকে টার্গেট করতেন। তাদের প্রলোভন দেখিয়ে বলতেন, ‘ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলে লাভ বা সুদ কম হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে টাকা না রেখে তার কথামতো রাখলে লাখে প্রতিমাসে হাজার টাকা লাভ পাওয়া যাবে।’
আর এ লোভে পড়েই লোকজন তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। এসময় কুতুব ও হারুন তাদের সবাইকে একটি করে চেক দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের জমা দেওয়া টাকার বিপরীতে সুদ বাবদ প্রতিমাসে নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কুতুব উধাও হয়ে যাওয়ায় তারা এখন চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অপর উদ্যোক্তা হারুনও পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান একাধিক গ্রাহক।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে চরলরেন্স এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেন ৯৭ লাখ, মো. লিটন ৮০ লাখ, মুরাদ হোসেন ৩০ লাখ, আবদুল করিম ১৮ লাখ, আন্ডারচর এলাকার ছকিনা খাতুন ১৮ লাখ, মাইজচরা এলাকার মাহমুদা সুলতানা ১৭ লাখ, মিয়া জাহান আট লাখ ৫০ হাজার ও চরমার্টিন এলাকার মো. ইউসুফ পাঁচ লাখসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় চারশ গ্রাহক কুতুব ও হারুনকে প্রায় ২০ কোটি টাকা ডিপোজিট করার জন্য দিয়েছিলেন বলে জানান একাধিক গ্রাহক।
উপজেলার চরপাগলা এলাকার সৌদি প্রবাসী মো. ইব্রাহীমের স্ত্রী রওনক জাহান জানান, প্রতি মাসে ৬ হাজার ৩০০ টাকা লাভ পাওয়ার প্রলোভনে পড়ে ছয় মাস আগে তিনি কুতুবের কাছে পাঁচ লাখ টাকা জমা রাখেন। কিন্তু এখন জানতে পেরেছেন কুতুব টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এ টাকা হারিয়ে এখন তারা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
স্থানীয় চরলরেন্স ফরাশগঞ্জ ফয়েজে আম আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আব্দুল করিম জানান, কুতুবের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। এ সুবাদে তিনিও ১৮ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। একই এলাকার ফারুক হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তিন বছর আগে ফিক্সড ডিপোজিটের নামে হারুনের কাছে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এর বিপরীতে হারুন চলতি হিসাবের চেক প্রদান করেন। পাশাপাশি হারুন প্রতিমাসে ফারুককে নির্ধারিত অঙ্কের লাভ দিয়ে আসছিলেন।
একই ধরনের কথা জানিয়েছেন চরলরেন্স এলাকার বাহার উদ্দিন ও সেলিনা আক্তারও। এ সময় তারা হারুন যেন পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাঈনুদ্দীন মিয়া জানান, প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে চরলরেন্স এজেন্ট শাখাটি পরিদর্শন করে কার্যক্রম স্থগিতের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রতারিত বেশ কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগও নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের প্রতারণার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, ঘটনাটি তারা শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে থানায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।