× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নওয়াপাড়া নৌবন্দর

পণ্য খালাসে অপেক্ষা করতে হয় জোয়ারের

রফিকুল আলম, অভয়নগর (যশোর)

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১০:২৩ এএম

পণ্য খালাসে অপেক্ষা করতে হয় জোয়ারের

যশোরের নওয়াপাড়া দেশের বৃহত্তম ও প্রথম শ্রেণির নৌবন্দর। নদীপথে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত কার্গো, বলগেট, ট্রলার বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যশস্য, পাথর, কয়লা, সারসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে নওয়াপাড়ায়। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয় এসব পণ্য। ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত এ বন্দরটি রেল, মহাসড়ক ও নৌপথের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। তবে নদে চর পড়ে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে নওয়াপাড়া নৌবন্দর অচল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ব্ন্দর সচল রাখতে ভৈরব নদ খননের দাবি জনিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নওয়াপাড়া নদীবন্দরের ভৈরব সেতুসংলগ্ন এলাকায় অর্ধ কিলোমিটারজুড়ে নদের দুই-তৃতীয়াংশ চর পড়েছে। এ ছাড়া নদীবন্দরের নওয়াপাড়া জুট মিলসংলগ্ন এলাকা, বেঙ্গল খেয়াঘাট থেকে নওয়াপাড়া মাছবাজার পর্যন্ত, নওয়াপাড়া গ্লোব ঘাট, তালতলা ঘাটসংলগ্ন এলাকায় অধিক পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এতে জোয়ারের সময় ও মালবাহী কার্গো জাহাজ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ছাড়া খেয়া পারাপারেও চরম বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে।

সঙ্গে যোগ হয়েছে অবৈধ দখল। ব্যবসায়ীরা জানান, দখলদাররা প্রথমে নদে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে। পরে সেখানে বালু অথবা মাটি দিয়ে ভরাট করে। এরপর সুযোগ বুঝে নির্মাণ করে স্থায়ী স্থাপনা। এতে নদের নাব্যতা কমে ও গতিপথ ছোট হয়ে গেছে। পণ্য নিয়ে আসা কার্গো থেকে মালামাল খালাসের জন্য জোয়ার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের। 

ব্যবসায়ীরা জানান, পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় এবং দখলবাজদের দৌরাত্ম্যে নদের বাঁক বদলে যাওয়ায় জেগে উঠছে চর। আর এ চরে প্রতিনিয়ত আটকে যাচ্ছে কার্গো জাহাজ। ফলে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে নদীবন্দর অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর নওয়াপাড়া হারাতে যাচ্ছে তার ঐতিহ্য।

নওয়াপাড়া বাজারের সার ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জানান, নদের পাড়ে গোডাউন, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনার দখলে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে এই নদ। নদীর এই বন্দরে প্রতিদিন মোংলা ও চট্টগ্রাম থেকে ৩০ থেকে ৪০টি পণ্যবোঝাই জাহাজ আসে। ঘাটে খালাসের অপেক্ষায় থাকে দুই শতাধিক জাহাজ। নদীর নাব্যতা সংকট দূর করতে না পারলে বন্দরের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে না। এ ছাড়া বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

সরকার গ্রুপের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএর অব্যবস্থাপনার কারণে নদী শেষ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যে ভ্যাট দিয়ে থাকি তার ১০ শতাংশ খরচ করে কাজ করলে বন্দরের চেহারা পাল্টে যেত।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই থেকে বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কার তথা ড্রেজিং শুরু হয়। বিআইডব্লিউটিএ দুইটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভৈরব নদে এ খননকাজ শুরু করে। তবে অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই লোকদেখানো ড্রেজিং কার্যক্রম চালায় বিআইডব্লিউটিএ। একটি ড্রেজার বছরব্যাপীই বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। অপরটি দিয়ে দায়সারাভাবে ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হয়, যা নদীবন্দরের কোনো কাজেই আসেনি। 

নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মণ্ডল বলেন, ‘ভৈরব নদকে ঘিরে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও ব্রোকার্স ইউনিয়নের ৫০ হাজারের অধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। রয়েছে নদীনির্ভর শত শত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার। ভৈরব নদকে ঘিরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ এই বন্দরের ক্ষেত্রে বরাবরই চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে। একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অচিরেই ভৈরব নদের খননসহ গাইড ওয়াল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

নওয়াপাড়া সার, খাদ্য, শস্য ও কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সহসভাপতি শাহ জালাল হোসেন বলেন, ‘এ বন্দরে প্রতিনিয়ত ২০০ থেকে ৩০০ ছোট বড় কার্গো জাহাজ সার, গম, ভুট্টা, সিমেন্ট, ভুসিমাল, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে নোঙর করে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই বন্দরে পণ্য ওঠানামা করে। ড্রেজিং না করলে ধ্বংস হয়ে যাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ী মোকাম। বেকার হয়ে পড়বে ৩৫ হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক। পথে বসবে শত শত ব্যবসায়ী।’ 

নওয়াপাড়া বাজারের সার ব্যবসায়ী ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল বলেন, জরুরিভাবে দখলমুক্ত করে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করে ভৈরব নদ রক্ষা করতে হবে। ভৈরব নদ না বাঁচলে ধ্বংস হয়ে যাবে নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী মোকাম। পথে বসবে হাজার হাজার পরিবার। তিনি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে পরিকল্পিতভাবে নদী খননের পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের দাবি জানান। 

নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ নদী দখল, দূষণ ও ভরাট হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নওয়াপাড়া নদীবন্দর রক্ষায় ভৈরব নদ খনন ও গাইড ওয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নওয়াপাড়া নদীবন্দর তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে। এ ছাড়া নদীবন্দর রক্ষায় সম্প্রতি অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যা চলমান থাকবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা