সেলিম রানা, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১৫ পিএম
প্রযুক্তির উৎকর্ষে এবং বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। ছবিটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পালপাড়া গ্রামের। প্রবা ফটো
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার শতাধিক পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস মৃৎশিল্প। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষে এবং বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। পূর্বপূরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাকেই আঁকড়ে থাকা পালরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বাজারে তেমন চাহিদা না থাকায় মৃৎশিল্পনির্ভর পরিবারগুলো জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে।
মৃৎশিল্পে জড়িত পরিবারের সদস্যরা জানান, উপজেলার পাড়াগ্রাম, পালপাড়া, বোয়ালী, বলিয়াদীসহ কয়েক গ্রামে রয়েছে শতাধিক পাল পরিবার। তবে প্রযুক্তির উন্নয়নে প্লাস্টিক, মেলামাইন এবং সিরামিক পণ্যের সহজলভ্যতা ও চাহিদা বাড়ায় কমে গেছে মাটির তৈরি পণ্যের কদর। এতে বিপাকে পড়েছেন মৃৎশিল্পে জড়িত পালরা। তা ছাড়া বেড়েছে মাটি, জ্বালানি কাঠসহ অন্যান্য উপকরণের দাম। এতে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। সে হিসেবে বাড়েনি দাম। এ পেশায় জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই সন্তানদের এই পেশায় সম্পৃক্ত করতে চান না। তবে এখন যারা আছেন তারা পূর্বপুরুষেরে এ পেশা নিয়েই থাকতে চান।
পালপাড়া গ্রামের রণজিদ পাল ও সোহাগী রানী পাল জানান, বছরের বেশিরভাগ সময় তাদের হাতে কাজ থাকে না। গ্রাম্য হাটবাজারে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করা জিনিসপত্র নিয়ে অলস সময় বসে থাকতে হয়। এ পেশায় যুক্ত থেকে এখন সংসার চালানোই দায় হয়ে গেছে।
রণজিদ পাল বলেন, ‘পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় অভাব-অনটন এখন নিত্যসঙ্গী। বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে থাকতে গিয়ে বসতভিটা বন্ধকি ভিটায় পরিণত হয়েছে। এ শিল্প বাঁচাতে হলে স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ প্রদান করতে হবে। না হয় হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।’
শ্রীমতি পাল বলেন, ‘মাটি আমাদের এলাকায় পাওয়া যায় না। অনেক দূর থেকে মাটি আনলে খরচ বেড়ে যায়। দামও আগের চেয়ে বেশি। তাই লাভের মুখ দেখি না। একসময় চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক প্রসার ছিল মৃৎশিল্পীদের তৈরি ঘট, ধুপোতি, ডিয়ার, ফুলের টপ, কলস, হাঁড়ি-পাতিল, গামলা। অন্যদিকে বৈশাখী মেলা ও ঈদ এলে পালপাড়ায় ঘুম হারাম হয়ে যেত। দিন-রাত মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত থাকত পুরো কুমারপাড়া। এখন আর তেমন ব্যস্ততা নেই। মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, ‘পাল সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের পেশা টিকিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পীদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হবে।’