ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্প
রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৫৬ এএম
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১১:১৭ এএম
প্রকল্প স্থায়ী করণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রাখে বাংলাদেশ ন্যাশনাল সার্ভিস পরিষদ কুড়িগ্রাম জেলা শাখা। পুরান ছবি : সংগৃহীত
সরকারের তৃতীয় দফা ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হলেও সুখবর নেই কুড়িগ্রামে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির ৩০ হাজার বেকার যুবক-যুবতীর। সাময়িক কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখলেও দুই বছরের মাথায় চাকরি হারিয়ে তারা পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। চাকরিতে পুনর্বহালের মাধ্যমে জাতীয়করণের দাবিতে দফায় দফায় মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ, আন্দোলন-সংগ্রামেও ইতিবাচক সাড়া নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। দারিদ্র্যপীড়িত জেলার হাজারো যুবক-যুবতীর ভবিষ্যৎ যাত্রা এখন গন্তব্যহীন। সরকারের মেয়াদ শেষের আগেই চাকরি জাতীয়করণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন তারা।
কুড়িগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দারিদ্র্যপীড়িত জেলা কুড়িগ্রামে কর্মসংস্থানের সংকট বিবেচনায় নিয়ে ২০১০ সালে সরকার ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির পাইলট প্রকল্প চালু করে। ওই বছরের ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক (এসএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বেকারদের বিভিন্ন ট্রেডে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ওই বছরের ১৫ জুলাই প্রথম ব্যাচের ৯ হাজার ৭২১ জনকে মাসিক ছয় হাজার টাকা ভাতায় বিভিন্ন দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে চারটি ব্যাচে মোট ২৯ হাজার ৮১৫ জনকে সংযুক্ত করা হয়। পরে কুড়িগ্রামসহ দেশের ৩৭ জেলায় ১২৮টি উপজেলায় মোট ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৫ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। কাজের সুযোগ পেয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যান তারা।
সদর উপজেলার ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চাকরিতে দুই বছর ভালোই কেটেছে। কিন্তু চাকরি শেষে অন্য কোথাও আবেদনের বয়সও শেষ হয়ে যায়। তখন বুঝতে পারি চাকরিটা আমার জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ ছিল। সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করুক। দারিদ্র্যপীড়িত কুড়িগ্রামের ঘরে ঘরে চাকরির কথা বলা হয়েছিল। ঘরে ঘরে চাকরি তো দূরের কথা ৩০ হাজারেরই স্থায়ী চাকরি হলো না।’
অপর কর্মী অমল চন্দ্র বলেন, ‘চাকরিতে ঢুকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। কিন্তু চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় চরম হতাশায় জীবনযাপন করছি। সরকার চাকরি না দিলেও স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। নতুন করে বাঁচতে পারব অন্তত।’
বাংলাদেশ ন্যাশনাল সার্ভিস একতা কল্যাণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিক হাসান বলেন, ‘চাকরি পুনর্বহালসহ স্থায়ীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছি। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী সবার মুখে হাসি ফোটাবেন। আমাদের সুদিন আসবে।’
কুড়িগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী আর রেজা বলেন, ‘ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে তাদের নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা চলছে। আপাতত স্বল্প পরিসরে উপজেলাভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ-কর্মশালায় যুক্ত করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। যতটুকু জানি চূড়ান্তভাবে এর কোনো রূপরেখা হয়নি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীরা চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছে। যা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব নিরসন সহজ বিষয় নয়। এখন সরকার যদি মনে করে তাহলে হয়তো তাদের ভাগ্যের পরির্তন হতেও পারে।’
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি দুই বছর মেয়াদে ছিল। এখন তো তাদের চাকরি নেই। সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো কন্ডিশনও ছিল না। এ ছাড়া তাদের নিয়ে সরকারের বর্তমান কোনো ধরনের পরিকল্পনা নেই।’